‘কয়েকটি অদৃশ্য হাত, বিস্তীর্ণ চেতনালোকে নজরদারি করে, কয়েকটি সশস্ত্র আঙুল সর্বদা পিছু নেয় আমার!’ কবিতা যার পিছু নেয়, তার জন্যে অপেক্ষা করে এক আশ্চর্য রসাতল। সমস্ত ক্রিয়াকর্মের মধ্যেও অদৃশ্য তিরন্দাজের মতো তাকে ধাওয়া করে নিয়ত। কখনও কখনও তাকে বিপর্যস্ত করে তোলে। কখনও সন্ধান দেয় অপার আনন্দময় পৃথিবীর। কবিতার আনন্দ-বেদনার অমেয় ব্যঞ্জনাধীন পৃথিবীতে কবি দর্শক ও দ্রষ্টা, রাজা ও স্রষ্টা। অভিজিৎ মৃধা পেশায় চিকিৎসক। নেশায় কবিতাচর্চাকারী। টগবগে এই তরুণ, কবিতার ভিতর দিয়ে নিজের না-বলা কথাগুলো তুলে ধরতে চেয়েছেন। প্রচুর বক্তব্য আছে তার কবিতায়। সেই বক্তব্য সবসময়ই কবিতা হয়ে উঠেছে, তা বলা চলে না। অনেক অভিজ্ঞজনের ক্ষেত্রেও তা কঠিন; তরুণের জন্যে তো দুঃসাধ্যপ্রায়। ছন্দ কিংবা অন্যান্য আলঙ্কারিক উপাচারগুলোর কথা বাদ দিলেও কবিতার সবচেয়ে বড়ো উপাদান যে-ব্যঞ্জনা, সেখানে পরিপূর্ণতা রয়েছে। এই দুর্বিনীত, দুশ্চিকিৎস্য ভার্চুয়াল দুনিয়ায়, চিন্তা, বিস্তীর্ণ, পুঁজি-আগ্রাসিত বাণিজ্যিক পৃথিবীতে এ-যুগের একজন তরুণ চিকিৎসক, বড়ো অঙ্কের ‘প্রাইভেট চেম্বার’ বাদ দিয়ে সময় ব্যয় করে কবিতা লিখছেন, এটা তার সময়ের বিবেচনায় প্রায় অতুলনীয় একটি ব্যাপার। কেবল এই বিবেচনাতেই তাকে অভিবাদন জানাতেই হয়। অভিজিৎ যুক্তি ও বিজ্ঞানমনস্ক কবিতা লিখতে চেয়েছেন। তার কবিতাশরীরে বিবিধ কুসংস্কারের বিরুদ্ধে উচ্চারণ রয়েছে। রয়েছে বিবর্তনবাদ, জেনেটিক্স, ঈশ্বরকণা, কৃষ্ণবিবর, মহাবিস্ফোরণ, প্লানচেট, সুপারনোভা ইত্যাদি বিজ্ঞানদীপ্ত শব্দাবলির ব্যবহার। তার দৃষ্টিভঙ্গি স্বচ্ছ ও মানবিক। ‘বিচ্ছিন্ন নির্বাণ-দ্বীপ’ অভিজিতের প্রথম কাব্যপ্রচেষ্টা হিসেবে প্রশংসার দাবি রাখে।