এই গ্রন্থের গল্পগুলোকে ঠিক গল্প বলা যাবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। বাঙালির গর্ব ও অহংকারের মুক্তিযুদ্ধকালীন একাধিক গণহত্যা ও সত্য ঘটনাগুলো গল্পের আদলে উদ্ধৃত করার চেষ্টা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সারা জীবন আন্দোলন-সংগ্রাম করে অধিকার আদায়ের এই ‘প্রতিবাদী চেতনা’ই আমাদের দিয়ে গেছেন। এটাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। এটাই স্বাধীনতার চেতনা। প্রতিবাদ-প্রতিরোধের এই চেতনাই মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে অনন্তকাল রক্ষা করবে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে এই চেতনা সঞ্চারিত করতে পারলেই চিরদিন টিকে থাকবে আমাদের প্রিয় স্বাধীনতা। সুফিয়া বেওয়া শোকে পাথর হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। ছেলের রক্তাক্ত জামা, লুঙ্গি, গামছা, পুত্রবধূর কাপড়-চোপড় পুঁটলি বেঁধে কাঁখে নিয়ে ঘুরে বেড়ান। এভাবে ধুঁকে ধুঁকে অল্পদিনের মধ্যে সুফিয়া বেওয়া মারা যান। সুফিয়া বেওয়ার পরিত্যক্ত বসতভিটার পাশে শিল কড়ই গাছের নিচে রাজাকার বশির কসাইয়ের মৃত্যুর ঘটনাটি ভৌতিক রহস্য ও মুখরোচক গল্প তৈরি করেছে। লাশের শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই, ঘাড় মটকানো। লাশটি সুফিয়া বেওয়ার বাড়ির পাশে পড়ে আছে কেন? নাকি নিয়তিই রাজাকার বশির কসাইয়ের অভিশপ্ত জীবনের এই পরিণতি দিয়েছে? বীর মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদের আত্মত্যাগ ও দেশপ্রেম আমাদের মাতৃভ‚মিকে করেছে মহিমান্বিত...। স্বাধীনতা আমাদের জাতীয় জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন। কিন্তু সেই স্বাধীনতা রক্ষার জন্য অবশ্যই নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তুলতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস, সংগ্রামের গৌরবময় ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে হবে। দেশমাতৃকার সেবায় উজ্জীবিত, উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সর্বোপরি প্রজন্মের মনন-চেতনায় দেশপ্রেমের স্ফুরণ ঘটাতে হবে। তবেই দেশ এগিয়ে যাবে, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা হয়ে উঠবে। এটাই হবে বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের সার্থকতা। আশা করি গল্পগুলো পাঠকদের ভালো লাগবে।
শিক্ষা ও সাহিত্যের প্রতি প্রকৃত অনুরাগ এবং বিশ্লেষণাত্মক চিন্তাধারার প্রতি যার প্রবল ঝোঁক। জন্ম ১৯৮০ সালের ২রা নভেম্বর; চাঁদপুর জেলার বৃহত্তর মতলব উপজেলায়। মা বেগম রোকেয়া আক্তার এবং বাবা আশেক উল্লাহ প্রধান। পড়ালেখা করেছেন, মতলব সূর্যমুখী কচি-কাঁচা প্রাথমিক বিদ্যালয়, মতলব জে.বি. সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, মতলব সরকারি ডিগ্রি কলেজ, চাঁদপুর সরকারি কলেজ, ঢাকা তেজগাঁও কলেজ, কুমিল্লা সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ এবং চট্টগ্রাম সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে। তার পড়ালেখার ক্ষেত্র বৈচিত্র্যময়; রসায়ন, ইংরেজি সাহিত্য, শিক্ষণবিজ্ঞান, শিক্ষা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা। কিছুকাল উদ্ভিদবিজ্ঞান, আইন, বাংলা সাহিত্যও পড়েছেন। তিনি মাধ্যমিক শিক্ষাক্রম, কথাসাহিত্য রচনা, পাণ্ডুলিপি সম্পাদনা, সাংবাদিকতা, রিসার্চ মেথডলোজি বিষয়ে কোর্স ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। শিক্ষকতা করেছেন প্রায় এক যুগ—একটি ইংরেজি ভার্শন উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। সেখান থেকে উপাধ্যক্ষ হিসেবে শিক্ষকতার ইতি টানেন। তিনি নন-ফিকশনের পাশাপাশি ফিকশনেও সমান স্বচ্ছন্দ। বাংলা ও ইংরেজি জাতীয় দৈনিকের সাহিত্য পাতায় নিয়মিত তার গল্প, বুক রিভিউ, অনুবাদ প্রকাশিত হয়। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ এডুকেশন থেকে এমফিল থিসিস করছেন। বৃশ্চিক রাশির জাতক এই লেখক পরিবার ও বন্ধু-পরিসরে ‘রাসেল’ নামে সমধিক পরিচিত। তিনি স্ত্রী তাহমিনা আক্তার ও দুই কন্যা প্রান্তি, প্রার্থনাকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করেন।