প্রাণভাণ্ডারের বিচিত্র বিপুল ঐশ্বর্য থেকে উৎসারিত শব্দমালার পরস্পর সংযোজনে অঙ্কিত দৃশ্যপটই হলো কবিতা। বিচিত্র কথাটা এক্ষেত্রে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, ছোটো বা বড়ো মেশানো কবিতাই একটা থেকে অন্যটা পৃথক হয়। কবির মানসিক গতির ওপর কবিতার বৈচিত্র্য নির্ভর করে। মনের সর্বব্যাপী আনন্দ-বিষাদ-উপলব্ধির স্বাতন্ত্র্যের কারণে কবিতা যাপিত জীবনের নানামুখী ভাব প্রকাশে সক্ষম। প্রতিটি কবিতার শরীর নির্মাণে কবিকে নানামুখী ভাব প্রকাশে যত্নবান হওয়ার পাশাপাশি শব্দচয়ন, ছন্দ-মাত্রার ব্যবহারে সতর্ক হতে হয়। ড. নজরুল ইসলাম পেশায় কলেজ শিক্ষক। সাহিত্যের প্রতি প্রগাঢ় অনুরাগ। তাঁর লেখালেখির চর্চা ও চেষ্টা নিরন্তর। তাঁর কবিতায় কাব্যশিল্পের ব্যাকরণ সম্পূর্ণরূপে অনুসরিত না হলেও ভাব প্রকাশে অবলম্বিত প্রাঞ্জলতা পাঠকরে মুগ্ধ করবে? অনর্থক কঠিন শব্দ ব্যবহারের প্রবণতা লক্ষ করা যায় না তাঁর কবিতায়। বিষয়বস্তু সচরাচর সাধারণ পরিপার্শ্ব থেকে আহরিত এবং দৃশ্যপট নির্মাণে সাধারণ পাঠকের আনন্দ নিশ্চিত করার দিকেই তাঁর ঝোঁক বেশি। সে কারণে ড. নজরুলের কবিতা সুখপাঠ্য। বর্তমান কাব্যগ্রন্থটি শিরোনাম পিছু হটে অভিমান। এই গ্রন্থের একটি কবিতার শিরোনাম থেকেই নামকরণ করা হয়েছে। অভিমান যখন হয় তখন মনে হয় ওটা চিরকালীন একটা রূপ নিয়ে মনকে ক্রমাগত আন্দোলিত করতে থাকবে। কিন্তু তেমনি হয় না, সময়ের আবর্তনে অভিমান মুছে যায়। মুছে যাওয়া অভিমান থেকে আবার ভালোবাসারও জন্ম হয়- অভিমান সম্পর্কে কবির এই মনোভাব সংগত। এই কাব্যগ্রন্থের প্রায় সব কবিতাই যাপিত জীবনের নানামুখী চিত্রিত করার প্রয়াসে লিখিত। বিরোধ-বিদ্বেষের অন্তহীন আঘাতে জর্জরিত সমাজ-দেশের জন্য যেমন আক্ষেপ আছে, তেমনি ভালোবাসার মানুষের প্রতি আগ্রহ-অভিমানও প্রকাশিত। ‘সমুদ্রের ঢেউয়ের মতোই তোমার সম্পর্কটা একদিন অনুভব করেছিলাম’-এর মতো আরও অসংখ্য চমৎকার পংক্তিমালায় সাজানো ড. নজরুলের এই কাব্যগ্রন্থটি পাঠকের কাছে সমাদৃত হবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।