সফলতা কে না চায়? যে কোনো দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে মানুষের জীবনের একটিমাত্র লক্ষ্য বেরিয়ে আসে আর তা হলো সফলতা, কিন্তু কাঁথা মুড়ি দিয়ে বিছানায় শুয়ে স্বপ্ন দেখলেই সফলতা আসে না। সফল হতে হলে কিছু নীতিমালা নিজের মধ্যে ধারণ করার জন্য স্টিফেন আর. কোভি তাঁর অত্যন্ত জনপ্রিয় গ্রন্থ দ্য সেভেন হ্যাবিটস অব হাইলি এফেক্টিভ পিপল এ সাতটি অভ্যাসের প্রতি জোর দিয়েছেন। সতর্ক হওয়া; মনের শেষ থেকে শুরু করা; প্রথম জিনিসকে প্রথমে রাখা; জয়ের ভাবা/জয়লাভ করা; প্রথমে বুঝতে চাওয়া, তারপর বুঝা; সমন্বয় সাধন এবং অস্ত্রকে শান দেয়া। স্টিফেন এই নীতিমালার কৃতিত্ব দাবি না করে বরং বলেছেন যে এগুলো তার নিজস্ব নয়, এগুলো সবসময়ই প্রকৃতিতে বিদ্যমান ছিল। সমগ্র বিশ^ বদলে গেলেও এই নীতিমালা কখনো বদলায় না। সৃষ্টির শুরু থেকে যারাই এসব নীতিমালা বিশ্বাস, চর্চা ও ধারণ করেছেন, কেবল তারাই সফল হতে পেরেছেন। সাফল্যের পরিবেশ কখনোই কারুর জন্য তৈরি ছিল না। একে সবসময় তৈরি করে নিতে হয়েছে। আর একক প্রচেষ্টায় সফলতা আসে না। নিজস্ব শ্রম, মেধা, চর্চার পাশাপাশি চারপাশের জগতকে আপন করে নিতে পারলেই সাফল্যের সোনার হরিণ ধীরে ধীরে ধরা দিতে আসে। সফলতার সংক্ষিপ্ত কোনো রাস্তাও নেই। মানুষকে কাজ করতে হয়, নীতি মানতে হয়, মেধার চর্চা করতে হয়, চরিত্র নির্মাণ করতে হয়, সমন্বয় সাধন করতে হয়, বিষয়ের গভীরে যেতে হয়, সমস্যার মূল বের করে নিতে হয় এবং তারপর পুরো বিষয়টি আয়ত্তে আনতে হয়। কিন্তু রাস্তা ও গন্তব্য জানা না থাকলে মানুষ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? তার সমস্ত মেধা, চেষ্টা, তৎপরতা বিফল হতে বাধ্য। কাজেই কেবল সফল হতে চাইলেই চলে না, প্রকৃত পথ ধরে এগিয়ে এগিয়ে যেতে হয়। আর সেই সুনির্দিষ্ট পথের নিখুঁত সন্ধান দেয়া রয়েছে স্টিফেন আর. কোভি’র দ্য সেভেন হ্যাবিটস অব হাইলি এফেক্টিভ পিপল গ্রন্থে। জগতের সমস্ত সফল মানুষদের উত্তরণের কারণই হলো এই বইয়ের মূল উপজীব্য।
স্টিফেন আর. কোভি এর পূর্ণ নাম স্টিফেন রিচার্ডস কোভি। তিনি জন্ম নিয়েছিলেন ১৯৩২ সালের ২৪শে অক্টোবর। জন্মগতভাবে তিনি একজন আমেরিকান। তিনি একাধারে একজন শিক্ষক, লেখক, বক্তা ও ব্যবসায়ী ছিলেন। তাঁর বক্তব্যগুলো মূলত অনুপ্রেরণাদায়ী, যাকে আমরা বর্তমানে ‘মোটিভেশনাল স্পিচ’ নামেই বেশি চিনি। স্টিফেন আর কোভি এর বই সমূহ হচ্ছে ফার্স্ট থিংস ফার্স্ট, দ্য লিডার ইন মি, দ্য এইটথ হ্যাবিট, প্রিন্সিপ্যাল-সেন্টার্ড লিডারশিপ, দ্য থার্ড অল্টারনেটিভ ইত্যাদি। তাঁর প্রথম বই ছিল স্পিরিচুয়াল রুটস অফ হিউম্যান রিলেশনস (১৯৭০)। এটি ডেসেরেট বুক কোম্পানি থেকে প্রকাশ পায়। তাঁর পরবর্তী লেখাগুলোর পূর্বাভাস হিসেবে এই বইটিকে ধরা যায়। স্টিফেন আর. কোভি এর অনুবাদ বইগুলোর মাধ্যমে তাঁর অনুপ্রেরণাদায়ী বক্তব্য বিশ্বজোড়া মানুষের মধ্যে পৌঁছে যাচ্ছে। বাংলা ভাষাতেও তাঁর বই অনূদিত হয়েছে। তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় বই হলো ‘দ্য সেভেন হ্যাবিটস অফ হাইলি ইফেক্টিভ পিপল’। স্টিফেন আর. কোভি এর বই সমগ্র বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত, কারণ তিনি তাঁর লেখার মধ্য দিয়ে মানুষকে অনুপ্রেরণার ছোঁয়া দিতে পেরেছেন। ১৯৯৬ সালের টাইমস ম্যাগাজিন বিশ্বের ২৫ জন সর্বাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তির মধ্যে তাঁকে রাখে। ২০০৮ সালে তিনি স্টিফেন কোভি অনলাইন সম্প্রদায় গড়ে তোলেন। ২০১২ সালের ১৬ জুলাই কোভি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। মৃত্যুর সময়ে তিনি উটাহ স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে জন এম. হান্টসম্যান স্কুল অফ বিজনেসের অধ্যাপক ছিলেন। তাঁর পড়াশোনাও ব্যবসায় অনুষদের সাথে সম্পৃক্ত ছিল। তবে একটা সময় আমেরিকান সেলফ হেল্প বইগুলো পড়ে তাঁর মাথায় চিন্তা আসে যে, এভাবে তিনি অনেককেই হয়তো অনুপ্রাণিত করতে পারবেন। তিনি পিটার ড্রাকার ও কার্ল রজার্সের দ্বারা মনস্তাত্ত্বিকভাবে অনেকটা প্রভাবিত ছিলেন।