পৃষ্ঠা উল্টাবেন না' অনেকটা সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ। এমন সতর্কবার্তা কোনো কবি দিয়েছিলেন আগে, কখনো? মনে হয় না। তার মানে আপন অপু কবিতার বইয়ের নামকরণেই একটা চমক দেখালেন। কবিতায় এসে দেখালেন ভিন্নতা। ফিরে গেলেন 'পরানের গহীন ভিতর'র স্টাইলে। অলংকরণ আর কবিতার পঙক্তি— মিলেমিশে একাকার। পঙক্তির পর পঙক্তি সাজিয়ে আপন অপু আসলে কী বলতে চেয়েছেন? কী শোনাতে চেয়েছেন? নতুনত্বের জায়গা কোথায়? প্রেম, বিরহ-বেদনা ব্যক্তি থেকে তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রে। প্রেমিকা আমার— ডেমোক্রেসির স্টুডেন্ট, ফ্যাসিজমের প্রফেসর।এই যে প্রেমিকা, তিনি আসলে কে? রক্তমাংসের মানুষ? নাকি রাষ্ট্র? ভাবনার জায়গা তো এখানেই। এই ধারণা মজবুত হয় তখন, যখন দেখি তিনি লিখেন— "মত প্রকাশের স্বাধীনতায় মধ্যাঙ্গুলি বুদ্ধিজীবীর স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি!" কিংবা, "শুয়োরে শুয়োরে খেলায় আমজনতা গোল খায়!" কিছুক্ষণ পর, এই কবি, হয়ে উঠেন আপাদমস্তক প্রেমিক। "তোমার জলে ভেজার পরে বৃষ্টিতে ভেজার ইচ্ছে হারিয়েছে।" আপন অপু ঐশ্বরিক প্রেমে নয়, তার প্রেমে এসে শরীর। কাম প্রেমকে দিয়েছে অন্য রূপ। কামমূখ্য কবিতা লিখতে যেয়ে তিনি ছলাকলার আশ্রয় গ্রহণ করেননি। ভণিতা ছাড়াই লিখে ফেলেন— "জল হয়ে আসছি, গড়াব তোমার গায়।" যে কবি প্রেমের গান গায়। কথা বলে শরীরের। সেই কবি, মুহূর্তেই বদলে যান। সুর তোলেন বিরহী বাঁশিতে। "আমার চাঁদ আজ জোছনা বিলায় অন্য কারো উঠোনে যাচ্ছি আমি দুমড়ে মুচড়ে নির্জন ঘরের কোণে।" আপন অপু 'পৃষ্ঠা উল্টাবেন না' অল্প পরিসরে, বৃহৎ জীবনের কথা বলেছেন।
আপন অপু এই সময়ের অত্যন্ত মেধাবী তরুণ শিশুসাহিত্যিক, সাংবাদিক ও নির্মাতা। আপন অপু ছোটদের জন্য লিখেই বেশি আনন্দ পান। লেখালেখি তার ভালো লাগা ও ভালোবাসার জায়গা। তার প্রতিটি লেখাতেই ছোটদের জন্য সুন্দর একটি বার্তা থাকে, ইতিবাচক দিক থাকে। ছোটদের নিয়ে সুন্দর একটি আগামীর স্বপ্ন তার। লেখক হিসেবে যথেষ্ট সম্ভাবনাময় আপন অপুর সৃষ্টিশীল সত্তা। প্রকাশিত বইগুলো তার সৃজনশীলতার অন্যতম উদাহরণ। তার প্রথম বই ‘আম কুড়ানোর দিন’ প্রকাশিত হয় ২০১৬ সালে। শিশুতোষ গল্পের এই বইটি প্রকাশের পরই পাঠক মহলে ব্যাপক প্রশংসিত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় প্রকাশিত হয় শিশুতোষ গল্পগ্রন্থ ‘পরী এলো রাজার দেশে’, ‘ময়না পাখি ছড়া বলে’, ‘সাগরে গেল মিউ ব্যাঙ’, ‘ফুটলো হাসি সবার মুখে’। ২০২০ বইমেলায় প্রকাশিত হয় তার কিশোর উপযোগী গোয়েন্দা উপন্যাস ‘গোয়েন্দা টোটনদা’। আপন অপু লেখালেখির পাশাপাশি একজন সংস্কৃতিকর্মী, সৃজনশীল নির্মাতা, সাংবাদিক ও দক্ষ সংগঠক। নির্মাতা হিসেবেও সুনাম অর্জন করেছেন। নাটকের গল্প রচনার পাশাপাশি ডকুমেন্টারির চিত্রনাট্য করেছেন, মিউিজিক ভিডিও, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। দেশের প্রতিষ্ঠিত একটি গণমাধ্যমের সহ-সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আপন অপু একাধিক গণমাধ্যামে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। আপন অপু টিন ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম ‘পরিচয়’ এর প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক। এই প্ল্যাটফর্মের দেশের শিশু-কিশোরদের সৃজনশীল প্রতিভা বিকাশ ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ করতে কাজ করছে। সব মিলিয়ে এই তরুণ বয়সেই নানাবিধ সৃষ্টিশীল কাজের অভিজ্ঞতায় নিজে যেমন ঋদ্ধ হয়েছেন, তেমনি মিডিয়া ও সংস্কৃতি অঙ্গনে নিরলসভাবে ভূমিকা রেখে চলেছেন। আপন অপু রচিত গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘লাল সবুজের বাংলাদেশ’-শিল্পী পুষ্পিতা ও মাহিন, ‘দিল ডুবে’-শিল্পী বর্ষা মাহমুদ, ‘বিশ্বপ্রেমিক’-শিল্পী সানি, ‘লিগ্যাল এইড’ যুগলশিল্পী খন্দকার বাপ্পি ও ডেইজি সারওয়ার (সরকারিভাবে ঢাকা জেলা লিগ্যাল এইড অফিস কর্তৃক প্রকাশিত), ‘তোর প্রেমে ভাসি ডুবি’ -শিল্পী স্বর্ণালী চক্রবর্তী, ‘সোনাপাখি’ -শিল্পী বনি আমিন। আপন অপুর রচনা ও পরিচালনায় নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র- ‘ছুটির দিনে’, ‘একটি পতাকার গল্প’, ‘দ্য ব্রোকেন ড্রিম’ ও ‘চর্মকার’।