আমার সামনে ঘটে যাওয়া একটি বাস্তব ও সত্য ঘটনার সমাজচিত্র উপন্যাসটিতে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। বাংলার আনাচে কানাচে ঘুরে এমন দু’একটি ঘটনা খুঁজে বের করা কারো পক্ষে দুঃসাধ্য হলেও এমন ঘটনা যে একেবারেই ঘটছে না তা বলা বাহুল্য। গল্প লিখতে গিয়ে কাহিনী সংগ্রহের পর মনে হলো-কাহিনীটি সুন্দর একটা উপন্যাসের উপজীব্য এবং তখন থেকেই লেখা শুরু। রচনাটিতে মোট পঞ্চান্নটি পরিচ্ছেদ রয়েছে। চরিত্র সংখ্যা প্রধানত আট। বিষয়বস্তু নারী-পুরুষের মনস্তত্ত¡। রচনাটির কেন্দ্রীয় চরিত্র আবিদ ও আশা। এছাড়া রয়েছে আবিদের স্ত্রী আলেয়া, আশার মা আঞ্জুমান আরা। আশার সহপাঠী রাকিব চরিত্রটি সরাসরি ক্রিয়াশীল না থাকলেও কাহিনীর মোড় ঘোরাতে চরিত্রটি যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছে। আবিদ হাসান একজন উচ্চশিক্ষিত হৃদয়বান ব্যক্তি। যিনি তার এলাকাকে আলোকিত করার উদ্দেশ্যে আলোকিত মানুষ গড়ে তুলতে নিভৃত পল্লীতে নব-প্রতিষ্ঠিত একটি কলেজে শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করেন। তিনি তার শ্রম ও সাধনা দিয়ে অনেক প্রতিভাবান শিক্ষার্থী তৈরী করতে সক্ষম হয়েছেন। তার হাতে গড়া শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত দেশসেরা বিশ^বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সুযোগ পেয়ে বড় বড় রাষ্ট্রীয় পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত হচ্ছে। তাই আবিদ স্যারের সুনাম চারিদিকে প্রতিনিয়ত বিস্তার লাভ করে চলেছে। অনেকে রূপক অর্থে বলতে থাকেন- “স্যারের হাত পরশ পাথর। স্যার হাত দিয়ে লোহাকে ধরলে, লোহাও সোনা হয়ে যায়।” আশার আবির্ভাব ঘটে একজন উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী হিসেবে। মেস মালিকের অনুমতি ছাড়া মেসের ছাদ থেকে দুটি আম পেড়ে খাওয়ায় সে খুবই অনুতপ্ত হয়। পরিত্রাণের জন্য আবিদ স্যারের সাথে পরামর্শ করে মালিকের কাছে ক্ষমা চাওয়া তার চরিত্রের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আর এই দৃষ্টান্ত তার সৌন্দর্যের দরিদ্রতাকে আবিদের কাছে নক্ষত্রের মতো উজ্জ্বল করে তুললো। আশার চলাফেরা, কথাবার্তা, নিয়মানুবর্তিতা এবং মানুষের মতো মানুষ হবার ব্যাকুলতা তার চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলেছে। আশার প্রেম-তরীর কান্ডারী হবার অনেক প্রচেষ্টাই করেছিলো রাকিব। একবার হাল ধরেও ফেলেছিলো। পরবর্তীতে তা আর হয়ে ওঠেনি। আবিদ স্যার আশাকে বারবার মানুষ হবার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তাদেরকে সমান্তরালে চলতে বাধ্য করেছে। আঞ্জুমান আরা এবং আলেয়া দুজন-ই উপন্যাসের মূল কাহিনীর সাথে জড়িত। তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন আবার বিভিন্ন পরিস্থিতিও মোকাবেলা করেছেন। এরপর কীভাবে আশা এবং আবিদ স্যারের সম্পর্কটা ঘনিষ্ট হলো এবং তার পরিসমাপ্তি কীভাবে ঘটলো তা জানার জন্য বইটি পড়তে আমি পাঠকসমাজকে বিনীত অনুরোধ করছি।