মাসুম সাহেব, পেশায় প্রকৌশলী। এ মুহূর্তে বসে আছেন তার বাড়ির ড্রইং রুমের সোফাসেটে। সেখান থেকে উঠে গিয়ে বারান্দায় চেয়ারে হেলান দিয়ে চক্ষু বুঁজে আছেন। কি করবেন ভাবছেন। ভাবলেন ফোন করবেন বন্ধু শরীফ খানকে। : হ্যালো, হ্যালো। ধ্যাত। একটা লোকও ঠিকমত কল রিসিভ করে না। মেজাজটা বিগড়ে যায়। বাবা, ফোন যদি না-ই ধরবে পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো কেন? ল্যান্ডফোনের মত বাড়িতে রেখে দাও না! আবারও চুপ করে বারান্দায় দোলনা চেয়ারে বসে দুলছেন তিনি। হঠাৎ মনে পড়ল বাবার কথা। মনটা নরম হয়ে গেল। মাসুম সাহেব ফিরে গেলেন তার অতীতে। মাসুম সাহেবের বাবা মাদ্রাসা বোর্ডের কামিল পরীক্ষায় ১৯৫৮ সালে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছিলেন। এরপর পেশা হিসেবে শিক্ষকতাকেই বেছে নিয়েছিলেন। তার লেখা একটা বই ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে পাঠ্য ছিল। মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে তিনি ইসলাম ধর্মের পরীক্ষকও ছিলেন। তার কর্মস্থল ছিল গাজীপুর। প্রতিবছর রমজান মাসের ছুটিতে নিজ এলাকায় চলে আসতেন। বাড়ি লক্ষীপুরের একটি গ্রামে। রমজান মাস জুড়ে নিজ গ্রামের মসজিদে কোরআনের তাফসীর করতেন। মানুষ আগ্রহ ভরে শুনতেন। তিনি একজন গরীব মেধাবী ছাত্রকে মাধ্যমিক স্কুল থেকেই লেখাপড়া শিখিয়েছেন। মেধাবী এই ছাত্র ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএসে ভর্তি হয়। তার পর বিয়ে দিয়ে দেন। শশুর বাড়ির খরচে লেখাপড়া করে ডাক্তার হন। বর্তমানে ডাক্তার আবদুর রহিম অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছেন। তার বাবা জীবনের বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছেন কর্মস্থলে। তাই সন্তানদের লালন পালন, শিক্ষা দীক্ষার দায়িত্ব পালন করেছেন তার মা। মা সাত সন্তানের গর্বিত জননী। সাজানো গোছানো একটি পরিবার নির্মাণ করেছেন। সংসারের বেশির ভাগ কাজ মা নিজ হাতে করতেন। গ্রামের গরীব মহিলারা তার মায়ের কাজে সাহায্য করতেন। তিনি তাদেরকে আদর করে খাওয়াতেন ও টাকা পয়সা দিতেন। তার মা ছিলেন বেশ আবেগ প্রবণ। মায়ের কথা মনে পড়তে মাসুম আরও আবেগ প্রবণ হয়ে পড়লেন। মাসুম সাহেবের মাধ্যমিক স্কুল শুরু তার বাবার স্কুলে। গাজীপুরে। বাবার সাথে থেকে শুধু লেখা পড়ার প্রতিযোগিতা। মাসুমকে স্কুলের সবাই আদর করে। ভালবাসে। সে যেমন ¯মার্ট তেমনি শ্রম ও অধ্যাবসায়ের মাধ্যেমে লেখা পড়ায় অনেক সুনাম অর্জন করেছে। তাই স্কুলের ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক, এমনকি কি শিক্ষকের ছেলে হিসেবে এলাকার সবারই আদরের ছিলেন। ছোট্ট একটি ছেলে মাকে ছেড়ে বাবার সাথে চলে এসেছে লেখাপড়া শিখে অনেক বড় হবার আশায়। তাই স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মায়েরাও বাড়িতে ডেকে নিয়ে আদর করতেন. খাওয়াতেন। গরমের ছুটিতে ও রমজান মাসের ছুটিতে মাসুম মায়ের কাছে চলে আসতো।