কবিতা কী?— পাবলো নেরুদা বলেছিলেন, "কোনো কবিকে এ ধরনের প্রশ্ন করা অনেকটা কোনো মহিলাকে তার বয়স জিজ্ঞেস করার মতো"। কারন যারা লেখেন তাদের সবার অনুভবের ঐক্য একেকজনের একেক রকম।কবিতা হোল এক মেটাফিজিক্যাল থট। অভিজ্ঞতা এবং স্মৃতির রসায়ন একজন কবির ভেতর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে শব্দ জাদুবাক্যে পরিণত হওয়ার জন্য। সামন্তীয় যুগে কবিকুলের স্থান ছিল রাজসভা। কবিরা রচনা করতেন মহাকাব্য, পুঁথি, মর্সিয়া আর জনতার মাঝখানে, মুখে মুখে এসব গীত হতো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সূক্ষè পরিবর্তন আসে কবিতার সৃষ্টিতে। মে․লিক কবিরা সেই পরিবর্তন দ্রুত বুঝতে পারেন বিশেষ করে আঙ্গিক ও ভাষায়। রবীন্দ্রনাথ প্রথমদিকে কবিতার পরিবর্তন বুঝতে না পারলেও শেষের দিকে তিনি নিজেই এ ধাঁচে লিখতে শুরু করেন। তার আধুনিক কবিতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হল “নাগিনীরা চারদিকে ফেলিতেছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস” এই কবিতাটি। আমি কবিতা লেখা শুরু করি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্ররোচনায়। মানে রবি ঠাকুর ছিলেন আমার ধ্যান জ্ঞান। অনেক বছর আমার লেখায় কোন স্বকীয়তা ছিল না। এরপর কবি রফিক আজাদ দ্বারা প্রভাবিত হলাম। মাষ্টারর্স করেছি ইংরেজি সাহিত্যে। সেই সময় কিটস বাইরন শেলী ইয়েটস এবং প্রিয় শেক্সপিয়ার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছি। এখনো তাদের সৃষ্টি আমার অনুপ্রেরণা কিন্তু নিজস্বতা খুঁজে নিতে প্রত্যহ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। চিলির বিজ্ঞানী কবি নিকানর পাররা লিখেছিলেন ‘লিখ যা তোমার খুশি/কেবল তা যেন সাদা কাগজের চাইতে উৎকৃষ্ট হয়’। সাদা কাগজের চেয়ে উৎকৃষ্ট হতে গেলেই তো তাকে কবিতা হতে হবে। সেই কথা স্মরণে থাকে আমার সব সময়। আমার নিজস্ব ভাবনাগুলি—ই মনের সাদা কাগজে আঁচড় ফেলে যায়। “হিরণ্ময় পাখী মন” আমার তৃতীয় কাব্য গ্রন্থ। বইটিতে বেশ কিছু পদ্য যোগ করা হয়েছে লিমেরিক ও ছড়াও চেষ্টা করেছি সেই সাথে গদ্য বা অক্ষরভিত্তিক কবিতা ও স্থান পেয়েছে। একজন কবি ও আবৃত্তিকার এর দৃষ্টি ভঙ্গি থেকে এই কাব্য গ্রন্থের সৃষ্টি। বেশ কিছু আবৃত্তি যোগ্য কিবিতা এখানে আছে। এই গ্রন্থে নিজের মুক্তির কথা; ভাবনার কথা আবেগের কথা কষ্টের কথা ভালো লাগা ভালোবাসার কথা লিখেছি। আমার বিশ্বাস তা পড়ে অন্যেরাও মুক্তি অনুভব করবে।