লেখকমাত্রই জীবনের গল্প বলেন। কার জীবন? নিজের জীবনের গল্প বা তাঁর মননের চোরাকোঠায় যারা বাস করে তাদের, এক অর্থে তার সাথে সর্বক্ষণ লেগে আছে। ‘সে কেন জলের মতো ঘুরে-ঘুরে একা কথা কয়...।’ একবার অ্যালেন গিন্সবার্গের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন কোথায় তাঁরা পুরোনো লেখক থেকে পৃথক। অ্যালেন বলেছিলেন, একটা অগ্রিম ধারণা নিয়ে অনেকে লিখতে বসেন যে লেখাটা কীরকম হতে হবে। কিন্তু শেষপর্যন্ত দেখা যায় তারা লেখেন ঠিক যেভাবে বেঁচে আছেন তেমন। বাবলী হকও এর থেকে বাদ যান না। ঘুরে-ফিরে তাঁর জীবনের গল্প বা তাঁর দেখা-অদেখা বিশ্বাস-অবিশ্বাস স্বপ্ন-অনুভূতিগুলো বিভিন্ন রঙে চিত্রিত করেন। তাঁর গল্প বলার ভঙ্গিতে, ভাষার ব্যবহারে বাস্তব জাদুবাস্তবের অপূর্ব মিশেলে মায়াবী কথার জাল বুনে জীবনের নকশা এমন শিল্পমণ্ডিতভাবে এঁকেছেন যা আমাদের কথা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করবে নিঃসন্দেহে। এই বইয়ের গল্পগুলো পড়ে মনে হয়েছে চরিত্রগুলো লেখকের অন্তর্লীন মমতার আলিঙ্গনে আবৃত। যেটাকে ইংরেজিতে বলে interiorising অর্থাৎ শরীর মন মনস্বিতা হৃদয় দিয়ে চরিত্রগুলোর আত্মাকে তিনি সৃষ্টি করেছেন। সামগ্রিকভাবে বাবলী হকের ‘অ্যাভিনিউ পার হয়ে’ বইটি পাঠকমনে স্থায়ী আসন পাবে বলেই দৃঢ় বিশ্বাস।