আনন্দ সাজু, বাংলা কবিতার নির্জনতম কবি জীবনানন্দ দাশ তার একমাত্র কবিতাবিষয়ক গদ্যগ্রন্থ ‘কবিতার কথা’য় আমাদের জানিয়েছেন- ‘সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কবি’। সে কারণে কবির মেলায় প্রকৃত কবিকে খুঁজতে হয় আমাদের বারংবার। যে তরুণ, তার ভাবনায় তারুণ্য, প্রকাশে তারুণ্য; শব্দগুলো নির্ভার, প্রচলিত লজিক ভেঙে এক নতুন কাঠামো তৈরি হয় তার কবিতায়! এমনই এক সম্ভাবনার নাম আনন্দ সাজু। সাজুর কবিতা ছোট, কিন্তু পাঠক উপলব্ধির স্বাদ পেলে তা বুলেটের মতো। মর্মে মর্মে অনুভব করা যায় : ‘কদমতলীতে গেছি/বাদামতলীতেও গেছি;/মানুষতলীতে যাওয়া হয়নি’। ...দুটো চেনা জায়গায় (জ্ঞান)-কে নির্ভর করে কী অসাধারণ নির্মিত মানুষতলী (অজানা জ্ঞান)-র রূপায়ন করলো সাজু। তারপর বিবেকের কাছে দাঁড়াতেই হয়- আসলেই এতো মানুষের ভিড়ে আমাদের মানুষতলীতে যাওয়া হয়নি! প্রেম, ঈশ্বর আর যৌনতা নিয়ে গড়ে উঠেছে আনন্দ সাজুর গৃহপালিত কাব্যগ্রন্থ ‘আরামদায়ক বিষদাঁত। এই গ্রন্থের কবিতাগুলোতে হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের অসাম্প্রদায়িক নিরীক্ষা উঠে এসেছে; প্রচল যুক্তি কাঠামো ভাঙার প্রবণতাও লক্ষণীয়। সাজুর এই কাব্যগ্রন্থে বাস্তববাদী আবেদনের ভেতর সুফিবাদী চেতনার স্ফুরণ ঘটেছে উত্তরাধুনিক ভঙ্গিতে। তবে তারুণ্য যেমন উচ্ছ্বাস, তেমনি স্ফুলিঙ্গ! এই স্ফুলিঙ্গ যেন হারিয়ে না যায়, তার তাপ পড়ুক বাংলা কবিতায়। আসুন আমরা পাঠ করি আনন্দ সাজুর ‘আরামদায়ক বিষদাঁত’! মাসুদুল হক কবি ও গবেষক