আমার মুক্তিযুদ্ধের সহযোদ্ধারা একে একে প্রায় সকলেই চলে গেছে জীবনের পরপারে। এখন প্রায় নিঃসঙ্গ জীবন নিয়ে পড়ে আছি। রক্তস্বল্পতার সমস্যা, ডায়াবেটিস ইত্যাদি মোকাবেলা করে চলেছি। কিছুদিন আগে লেখা শেষ করেছি ‘মৃত্যুঞ্জয় স্পার্টার্কাস’ নাটক। তার কিছু আগে (ফেব্রুয়ারিতে) প্রকাশ করতে পেরেছি শতবর্ষে সোমেন সম্পাদনা গ্রন্থটি। নতুন কিছু লেখার পরিকল্পনা করছি। আগাম কোন সতর্কবার্তা ছাড়াই ৮ জুলাই আক্রান্ত হলাম হার্ট এ্যাটাকে। ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যায় থাকতেই জানতে পারলাম হার্টে ৯০ভাগ ব্লক। হৃৎপিন্ডে আশু বাইপাস সার্জারি প্রয়োজন। হাতের কাছে প্যাড আর কলম। চলছে জরুরি চিকিৎসা। বুঝলাম আমার সময় শেষ হয়ে এসেছে। কত কিছুই তো লেখার ছিল। ষাটের দশক থেকে সৃজনী লেখক ও শিল্পীগোষ্ঠীর সাথে থেকে প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। টুকটাক করে লেখেছি কবিতা, গল্প-উপন্যাস, নাটক ও নিবন্ধ। আর বুঝি লেখা হলো না। এখন দরোজায় কড়া নাড়ছে যম। সে কথা জানিয়ে অনেককে চিঠি লিখলাম। সবাইকে বিদায় জানিয়ে প্রবেশ করলাম অপারেশন থিয়েটারে ১ আগস্ট ২০২৩। অবশেষে জীবনের পড়ন্ত বেলায় ফিরে পেলাম নতুন জীবন। চিকিৎসাকালে যদিও জীবনসঙ্কট দেখা দিয়েছিল। চিকিৎসকের পরামর্শে চললো নিয়মিত প্রচুর ওষুধ সেবন আর দীর্ঘ বিশ্রাম শয্যা। কতদিন আর শুয়ে বসে থাকা যায়। তুলে নিলাম কাগজ-কলম। শুরু করলাম আমার হার্ট এ্যাটাক ও বাইপাস সার্জারি চিকিৎসার অভিজ্ঞতা দিয়ে। এছাড়া অন্যান্য কবিতার ভাবনাসম্বলিত পঙতিমালা আমার মস্তিষ্কে বিভিন্ন সময়ে এলোমেলো খেলা করতো। শয্যা বিশ্রামকালে সেগুলো পঙতিমালায় রূপ দিলাম। যদিও চলমান শারীরিক দূরাবস্থা আমার ভাবনাকে সামঞ্জস্যপূর্ণ লাবণ্যদানের ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে বিরাজ করছিল- কিংবা এটা আমার প্রকাশের দৈন্যতাও হতে পারে। ডিসেম্বর (২০২৩) পর্যন্ত ৩/৪ মাসের লেখাগুলো থেকে চয়ন করেই আমার বেলাশেষের বিষণ্ন বিলাপ কাব্যগ্রন্থের প্রকাশ।