অন্তদৃর্ষ্টি মেলে ধরার যাত্রা আককাস মাহমুদ—এর একটি বই বের হচ্ছে রমনার ছবি নিয়ে। খুব মজা লাগছে এই জেনে যে রমনায় হাজারো লোক সকাল বিকাল হাঁটাহাটি করে কিন্তু ছবি তুলে বই বের করার কথা ভাবে কয়জন? আমি বিষয়টা নিয়ে ভেবেছি। ছবি তো সব কিছুরই তোলা যায়, যিনি শিল্পী, মনের ভেতর নান্দনিক চিন্তার প্রকাশ ঘটলে তিনি ছবি তোলেন, ছবি আঁকেন, লেখেন কবিতা। এ সবই সৃজনশীল কর্মকান্ডের বহি:প্রকাশ। যিনি সৃজনশীল কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখেন তাঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও সম্মান অপরিসীম। মনের ভিতর থেকে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা আসে কিন্তু তা’ হয়তো সেইভাবে প্রকাশের গতি খুঁজে পায় না। আজকের সমাজে প্রায় সবাই আজকাল নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। না থেকেই উপায় কী? জীবন জীবিকার তাড়নায় যার যার প্রয়োজনীয় কাজটুকু করতে পারলেই তিনি আত্মপ্রসাদ অনুভব করেন, বাড়তি কাজের ধ্যান—ধারণা সুদূর পরাহত। এর মাঝেও যিনি কিছু চিন্তা ভাবনা করে গুছিয়ে নিজের মনের ডাক শুনে তার উত্তর খুঁজেন তিনি অসাধারণ। আক্কাস মাহমুদ এমন একজন ব্যক্তি যাঁর ছবির কথা লিখতে গিয়ে এসব কথা ঘুরে ফিরে আসছে। তাঁর সাথে আমার খুব বেশি জানাশুনা নেই। তারপরও তাঁর ছবি আমি ফেসবুকে দেখি, ভালো লাগে। অনেক ছবিতে তিনি রমনা লেকের স্নিগ্ধ শান্ত জলরাশির ছবি আপলোড করেন দেখে প্রশান্তি লাগে। লেকের জলরাশির সাথে উপরের দিকে তাকালে দেখা জয় নানা বৃক্ষের শাখা—প্রশাখা যেন আকাশটাকে ধরতে যাবে হাত বাড়িয়ে। কখনও নীলাকাশ বা মেঘলা দিনের আলোছায়ার খেলা; কখনো বা বৃক্ষরাজির শ্যামল ছায়া — বনের মায়া; বাহারি ফুলের রঙের মেলা। কত শত গাছগাছালির পাতার বাহার; রঙে রঙে নানা ফুলের বৈচিত্র্যময় সমাহার। সব মিলিয়ে জীবন যেন জেগে উঠে; জাগে পাখি, জাগে জীব জন্তু, কীট পতঙ্গ, পোকা মাকড়। জাগে মানুষ। কোন কোন মানুষ আবার রমনা পার্কে জেগে থেকেও ঘুমিয়ে যায় মগ্নতায়। সংসারের জটিল হিসাবে ক্লান্ত হয়ে মানুষ যখন হন হানিয়ে হাঁটতে থাকে তখন তারা ভুলতে চায়। জীবন, সংসার, হিসাব—নিকাশ, চাল ডালের বাজার দর, শেয়ার মার্কেট, প্রমোশন, বকেয়া বেতন, গাড়ির মডেল, নতুন বাড়ি, পুরনো ছাদ, পোকার ওষুধ, বাতের ব্যথা, পাশের বাসার জানালা, কিংবা ছাদে হাঁটতে নতুনসঙ্গী কিছুই যায় না বাদ। এসবের কিছু কিছু টুকিটাকি উড়াল প্লেনের মতো শো করে মাথার এপার থেকে ওপার যায় বেরিয়ে। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত, জীবনযাত্রায় হয়রান। রাজনীতি, ধর্ম, সরকার, ক্রিকেট, ফুটবল, ভোট, জোট, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ট্রাম্প, পুতিন, প্যালেস্টাইন, ইসরায়েল, দুধে ভেজাল, সারে ভেজাল, রেশনে ওজন কম, বাজার দর, মাংসের ওজনৃ এসব ছাপিয়ে আরও দশ মিনিট হাঁটতে চাওয়া — এই হলো রমনা পার্ক আর রমনার প্রতিদিনের ব্যবহারজীবীরা। এসবের অনুভূতি নিয়ে ছবি বানান আক্কাস মাহমুদ। হয়তো এসবের কিছু কিছু পরিচয় তুলে ধরবেন তিনি। রমনার ছবি নিয়ে বই — এই ছবিশিল্পী, আমার ধারণা, এসবের অনেক মুহূর্ত তুলে ধরবেন তার রমনার ছবিতে। মো. গোলাম রহমান সম্পাদক, আজকের পত্রিকা