মুসলিমদের জেনে রাখা উচিত, তাদের কোনো আন্দোলন সঠিক আকিদা-বিশ্বাসের নিরিখে প্রতিষ্ঠিত না হলে তা কোনোদিন সফল হবে না। ইসলামি ইতিহাসের আগাগোড়া পাঠ করলে অনুমিত হবে, বিশেষ করে সুলতান নুরুদ্দিন ও সালাহুদ্দিন আইয়ুবির যুগে ক্রুসেডে, উসমানিদের শাসনামলে সুলতান মুহাম্মাদের যুগে কনস্টান্টিনোপল বিজয়ে, ইউসুফ ইবনু তাশফিনের মুরাবিত সাম্রাজ্যের যুগে মুসলিমজাতি যে বিজয় ও সাহায্য লাভ করেছিল, তার পেছনে ছিল তাদের পরিচ্ছন্ন আকিদা। উপযুক্ত পরিকল্পনা। সাম্রাজ্যে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা। সমাজের দুর্নীতিবাজ, নষ্ট আকিদার লোকজন এবং ইয়াহুদি-খিষ্টানদের নিয়ন্ত্রণ করা ইত্যাদি। ইতিহাস সাক্ষী, শিয়ারা তাদের জন্মের শুরু থেকে যখনই সুযোগ পেয়েছে ইসলাম ও মুসলিম সমাজব্যবস্থার ওপর বিষাক্ত ছোবল হেনেছে। তারাই মূলত প্রথমে ইসলামের সুদৃঢ় ঐক্য তছনছ করেছে। চেঙ্গিস খানকে ডেকে এনে ধ্বংস করিয়েছে ঐতিহ্যবাহী শহর বাগদাদ। সাফাবি সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে প্রাচ্যের মুসলিমসমাজের জন্য জাহান্নামের পরিবেশ তৈরি করেছে। বক্ষ্যমাণ গ্রন্থে শিয়াদের পরিচয়, তাদের বিভিন্ন দল-উপদল, আকিদা-বিশ্বাস ইত্যাদি নিয়ে দালিলিকভাবে আদ্যোপান্ত আলোচনা করা হয়েছে। প্রত্যেক চিন্তাশীল ব্যক্তির উচিত, গ্রন্থটি একবার হলেও পাঠ করা। এতে আমরা তাদের ইতিহাস, ভ্রান্তি ও অপকর্ম সম্পর্কেও গভীরভাবে জানতে পারব।
ফকিহ, রাজনীতিক ও বিশ্বখ্যাত ইতিহাসগবেষক। ইসলামের ইতিহাসের উপর বিশ্লেষণধর্মী তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন। এই মহা মনীষী ১৯৬৩ সনে লিবিয়ার বেনগাজি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা বেনগাজিতেই করেন। যৌবনের প্রারম্ভেই গাদ্দাফির প্রহসনের শিকার হয়ে শায়খ সাল্লাবি আট বছর বন্দি থাকেন। মুক্তি পাওয়ার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি সাউদি আরব চলে যান। মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়া ও উসুলুদ্দিন বিভাগ থেকে ১৯৯৩ সনে অনার্স সম্পন্ন করেন। তারপর চলে যান সুদানের উম্মু দুরমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে উসুলুদ্দিন অনুষদের তাফসির ও উলুমুল কুরআন বিভাগ থেকে ১৯৯৬ সনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ১৯৯৯ সনে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘ফিকহুত তামকিন ফিল কুরআনিল কারিম’। ড. আলি সাল্লাবির রাজনৈতিক দীক্ষাগুরু বিশ্বখ্যাত ফকিহ ও রাজনীতিক ড. ইউসুফ আল কারজাবি। কারজাবির সান্নিধ্য অর্জনে তিনি ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে কাতার গমন করেন। নতুন ধারায় সিরাত ও ইসলামি ইতিহাসের তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে ড. আলি সাল্লাবি অনুসন্ধিৎসু পাঠকের আস্থা ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। নবিজির পুর্ণাঙ্গ সিরাত, খুলাফায়ে রাশিদিনের জীবনী, উমাইয়া খিলাফত, আব্বাসি খিলাফত, উসমানি খিলাফতের উত্থান-পতনসহ ইসলামি ইতিহাসের সাড়ে তেরোশ বছরের ইতিহাস তিনি রচনা করেছেন। তা ছাড়া ইসলামি ইতিহাসে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করা ব্যক্তিদের নিয়ে তিনি আলাদা আলাদা গ্রন্থ রচনা করেছেন। ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবির রচনা শুধু ইতিহাসের গতানুগতিক ধারাবর্ণনা নয়; তাঁর রচনায় রয়েছে বিশুদ্ধতার প্রামাণিক গ্রহণযোগ্যতা, জটিল-কঠিন বিষয়ের সাবলীল উপস্থাপনা ও ইতিহাসের আঁকবাঁকের সঙ্গে সমকালীন অবস্থার তুলনীয় শিক্ষা। এই মহা মনীষী সিরাত, ইতিহাস, ফিকহ ও উলুমুল কুরআনের উপর আশির অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর রচনাবলি ইংরেজি, তুর্কি, ফরাসি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়ে পৃথিবীর জ্ঞানগবেষকদের হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। আল্লাহ তাঁকে দীর্ঘ, নিরাপদ ও সুস্থ জীবন দান করুন। আমিন। —সালমান মোহাম্মদ লেখক, অনুবাদক ও সম্পাদক ২৪ মার্চ ২০২০