আধুনিক বাংলা কবিতার পাঠককে দুই ধরনের সংকটে পড়তে হয়। একটি এর বিষয়গত, অন্যটি আঙ্গিক-প্রকরণগত। বিষয়গত এই অর্থে, যে-সব বিষয় নিয়ে আধুনিক কবিরা কবিতা রচনা করেন, সে-সব বিষয় সম্পূর্ণ নতুন, না চর্বিতচর্বণ, এই নিয়ে পাঠকমনে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। অর্থাৎ ক্ল্যাসিক যুগের কবিতার পাশাপাশি রোমান্টিক যুগের কবিতার বিষয়াবলিও আধুনিক কবিতার বিষয় হতে পারে কি না, তা নিয়ে পাঠকমনে প্রশ্ন জাগতে পারে। এই প্রশ্নের সহজ উত্তরও দেওয়া সম্ভব। কারণ, বিষয় যেমন চিরপুরাতন, তেমনি চির- নতুনও। সুতরাং ক্ল্যাসিক-রোমান্টিক যুগের কবিতার বিষয় আধুনিক কালের কবিতার অনুষঙ্গ হতে কোনো বাধা নেই। বাকি থাকলো এর আঙ্গিক-প্রকরণগত দিক। এরমধ্যে আঙ্গিক নিয়ে পাঠকমনে তেমন প্রশ্ন ওঠে না। কিন্তু প্রকরণের মধ্যে ছন্দ নিয়ে পাঠকমনে বিভ্রান্তি তৈরি করেন খোদ কোনো কোনো কবিযশপ্রার্থী। কোনো কোনো কবিযশপ্রার্থী লিখিতভাবেও বলেন, 'ছন্দ জানা জরুরি, কিন্তু মানা জরুরি না।' তাদের এই উক্তির ভেতর সততা ও সত্যতা যে নেই, তা নিজেরাও উপলব্ধি করতে পারেন না। কারণ ছন্দ যিনি জানেন, তাঁর পক্ষে ছন্দ না মানার কোনো যৌক্তিক কারণ থাকতে পারে না। এছাড়া একথা তো স্বতঃসিদ্ধ-শিল্প-সাহিত্যের প্রতিটি শাখারই রয়েছে স্বতন্ত্র নিয়ম, স্বতন্ত্র অনুষঙ্গ। যেমন চিত্রকলার জন্য ড্রয়িং, জ্যামিতিক পরিমিতিবোধ, আলো-ছায়া ও রঙের ব্যবহারের নিয়ম জানতে হয় শিল্পীকে, তেমনি সংগীতশিল্পীকে মানতে হয় সারগাম।