“আমি মুজিব বলছি" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ একটি মহান ব্যক্তিত্ব, যার নির্দেশে আজও আমরা এগিয়ে চলেছি একটি শােষিত বঞ্চিত জাতির সার্বিক মুক্তির দিকে, সেই ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে আমাকে কিছু বলতে হবে--তা কৃত্তিবাস দা’র দেওয়া এ প্রস্তাবের আগে এমন করে কখনও ভাবিনি। তাই এই মহান ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে কিছু বলার আগে এইটুকু বলা দরকার যে শেখ মুজিব একটি নাম নয়; শেখ মুজিব একটি দর্শন। সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ, সামন্তবাদ ও পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে, জাতীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মুক্তিকামী মানুষের যে সংগ্রাম, যা আজ বিশ্বের ইতিহাসে এক নৃর্তন দিগন্তের উন্মােচন করতে চলেছে--তা শুধু শেখ মুজিবকে কেন্দ্র করেই নয় বরং শেখ মুজিবের দর্শন ভিত্তি করে এগিয়ে চলেছে। অসহযােগ ও প্রত্যক্ষ সংগ্রাম; সংসদীয় পদ্ধতি ও সশস্ত্র বিপ্লব--এদুয়ের সংমিশ্রণে গড়ে উঠা মুক্তি-সগ্রামের এক নুতন পথ। এক নতুন দর্শন,মুক্তিকামী মানুষের কাছে এক নূতন দিগন্ত খুলে দিয়েছে, কিভাবে সংসদীয় পদ্ধতি ব্যর্থ হলে সশস্ত্র বিপ্লব শুরু হয় এবং সশস্ত্র বিপ্লবের জন্য যে জনসমর্থনের প্রয়ােজন তা অসহযােগ ও সংসদীয় পদ্ধতিতে সৃষ্টি করে, বিপ্লবী সংগঠনের মাধ্যমে শত্রুকে চরম রূপে আঘাত হানা যায়; সে আন্দোলনে শেখ মুজিব এক নূতন অধ্যায়। তাই পৃথিবীর মুক্তিকামী মানুষের কাছে এই মহান ব্যক্তিত্বসম্পন্ন স্বাধীন বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একজন মুক্তির দিশারী হয়ে নতুন করে নতুন পথের সন্ধান দিচ্ছেন। শেখ মুজিবের সাথে আমার পরিচয় সংগঠনের মাধ্যমে। অর্থাৎ আমি যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সে সংগঠন ছাত্র লীগ’ করতে এসে। কেউ কেউ এ সংগঠনকে আওয়ামী লীগের বি-টিম হিসেবে ভুলও করে থাকেন! কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটা হলাে যুবধর্মে সংগঠিত পাকিস্তান উপনিবেশবাদের উপর চরমভাবে আঘাত হানার জন্য, অস্ত্রের জবাব অস্ত্রের মাধ্যমে দেওয়ার জন্য গড়ে ওঠা এক ছাত্র সংগঠন--যে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতাও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব । ভারত বিভক্তির সময় বাংলাদেশের মানুষের আশা-আকাঙ্খ “বাংলাদেশ” সাম্রাজ্যবাদের দ্বারা পদদলিত হয়ে এক সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের ফসল হিসেবে হস্তান্তরিত হয়েছিল বৃটিশ ঔপনিবেশবাদের হাতে এবং এই পাকিস্তান উপনিবেশবাদের শৃঙ্খলমুক্ত এক শােষণমুক্ত বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন নিয়ে জন্ম ছাত্র লীগ সংগঠনের । তাই আওয়ামী লীগ ও ছাত্র লীগের মধ্যে যে সম্পর্ক তা বঙ্গবন্ধুর ভাষায় খুব সহজ হয়ে ধরা পড়ে-“আমি আওয়ামী লীগ প্রধান আর ছাত্র লীগের আজীবন সভাপতি”। অর্থাৎ সংসদীয় রাজনীতির ভিত্তিতে গড়ে উঠা গণসংগঠন আওয়ামী লীগ আর যুবধর্মে বলীয়ান বিপ্লবের মন্ত্রে দীক্ষিত ছাত্র লীগ--এ দুই দর্শনের মিলনসেতু বঙ্গবন্ধু। তেমনি বাংলাদেশের মানুষকে শ্ৰেণীশােষণমুক্ত শােষণহীন সমাজে গড়ে উঠার সহায়তায় বঙ্গবন্ধুর আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে শ্রেণী সংগ্রামের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে শ্রমিক সংগঠন--শ্রমিক লীগ। কেননা তিনি বলেন-“কৃষক শ্রমিকের রাজত্ব কায়েম না হওয়া পর্যন্ত শােষিত মানুষের মুক্তি আসে না। তাই এই সংগঠনগুলাের মধ্যেই ফুটে উঠেছে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনের যথার্থতা।