লালন বাঙালি দর্শনের মহানায়ক দর্শনের বই, সে দর্শন বাংলাদেশের দর্শন। দর্শন বলতে পণ্ডিতগণ পাশ্চাত্য দর্শনকে বুঝে থাকেন। বাংলা ও বাঙালির দর্শনের কথা উঠলেই এদেশের পণ্ডিতগণ কেনো জানি সংকোচ বোধ করেন। দেশীয় পণ্ডিতগণের যুক্তি বাঙালির ভাব আছে, আবেগাতিশয্যও, আছে ধর্মের ঐতিহ্য; কিন্তু দর্শন নেই। কেনো না বাঙালির চিন্তায় আবেগ বেশি, যুক্তি কম। দর্শন ছাড়া মানুষ হয়? প্রতিটি চিন্তাশীল মানুষেরই একটা দর্শন আছে - আর তার সেই দর্শনকেই প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে সে নানা যুক্তির আশ্রয় নেয়। চিন্তা মাত্রই একটা আবেগ। আর সেই চিন্তাকে প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যম হচ্ছে যুক্তি। যুক্তির নিক্তিতে সই না পড়লে কেউই কোনো চিন্তাকে মেনে নেয় না। হোক সে ভাববাদি চিন্তা অথবা বস্তুবাদি। সাধারণে লালন ফকিরের পরিচয় বাউল পদ রচয়িতা এবং বাউল সাধক হিসেবে। কিন্তু লালন ফকির বস্তুত একজন দার্শনিক। তিনি তাঁর দর্শনচর্চার ভেতর দিয়ে বাঙালির দর্শনকে বিশ্বজনীনতা দিয়েছেন। বিশ্বে বাঙালির দর্শন দারিদ্র ঘুচিয়েছেন। লালন বাঙালি দর্শনের মহানায়ক গ্রন্থে মূলত আমরা বাঙালি দর্শনের ইতিহাস-ঐতিহ্য, স্বভাব-বৈশিষ্ট্য তুলে ধরার পাশাপাশি বাঙালি দর্শনের বিবর্তনের বাঁকগুলো সনাক্ত করে সেই প্রেক্ষিতে বাঙালি দর্শন এবং বিশ্ব দর্শনের তুল্যমূল্যে লালন ফকিরের দর্শনকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি এবং পরিশেষে এটা সনাক্ত করা। গেছে যে, গ্রীসের যেমন সক্রেটিস, জার্মানীর ফয়েরবাক, কার্ল মার্কস, কান্ট ও হেগেল; যুক্তরাজ্যের হিউম এবং রুশো- ভলটেয়ার ফ্রান্সের দার্শনিক, লালন ফকিরও তেমনি বাংলাদেশের দর্শনের মহানায়ক। একাডেমিক পর্যায়ে বাংলাদেশ দর্শন নিয়ে তেমন কোনো উল্লেখ্যযোগ্য গ্রন্থ নেই। আমরা আশা করছি বর্তমান গ্রন্থ সেই অভার পুরনে ভূমিকা রাখবে। এতে করে দর্শনের ছাত্ররা লাভবান হবেন সেই সাথে সাধারণ পাঠকগণ লালন ফকিরকে নতুনভাবে চিনতে পারবেন।
আবু ইসহাক হােসেন জন্ম সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ থানার তালম গ্রামে ২৫ নভেম্বর ১৯৭৪ সালে। তবে মায়ের দেওয়া তথ্য মতে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের মাঝামাঝি সময় তার জন্ম । চাচার কাছে পড়াশােনার হাতেখড়ি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্সসহ মাস্টার্স । একই বিভাগে ফকির লালন সাঁইয়ের উপর পিএইচডি গবেষণারত। কবিতা লেখার মধ্য দিয়ে লেখালেখি শুরু হলেও উপন্যাস, গল্প, ছড়া লিখছেন সমানভাবে। তবে তাকে সবচেয়ে বেশি টানে একাডেমিক গবেষণা। ইতােমধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক গবেষক হিসেবে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়েছেন । তিনি নিরন্তর লিখে চলেছেন বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণাধর্মী গ্রন্থ । লালন ফকিরের উপর রচিত তাঁর মৌলিক গবেষণা গ্রন্থ দেশে বিদেশে সমাদৃত । তিনি ক্রমেই নিজেকে ছড়িয়ে দিচ্ছেন সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় । ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে নিয়মিতভাবে অচিন মানুষ নামে বাউল দর্শনের উপর গবেষণাধর্মী অনুষ্ঠান গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা করে আসছেন। প্রায় দীর্ঘ সাত বছর তিনি নতুন কল্লোল সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন এবং দীর্ঘদিন ধরে একতারা নামক একাডেমিক জার্নাল সম্পাদনা করছেন। গবেষণার জন্য জাতীয় মানবধিকার সােসাইটি স্বর্ণপদক, বজ্রকণ্ঠ সম্মাননা ও বাউল বাজার সম্মাননা তিনি লাভ করেছেন।