শিল্পীকে চেনা যায় তাঁর কাজের মধ্য দিয়েই; তবে তাঁকে আরও বেশী করে জানা সম্ভব হয় তাঁর নিজের আত্মকথন পাওয়া গেলে। অসামান্য শিল্পী ছিলেন জহির রায়হান। শুরু করেছিলেন কথাসাহিক্যিক হিসেবে, পরে চলে যান চলচ্চিত্রে। উভয় ক্ষেত্রেই তাঁর সাফল্য ছিল অনন্যসাধারণ। বেঁচে ছিলেন মাত্র ৩৭ বছর; তাঁর মধ্যেই চলচ্চিত্রে এবং সাহিত্যে, এমনকি পত্রিকা সম্পাদনাতেও যে কাজ রেখে গেছেন তা অতুলনীয়। অসামান্য এই শিল্পীর জন্য আরও অনেক কাজ অপেক্ষা করছিল। এবং কাজগুলো তিনি করতেনও, যদি বেঁচে থাকতেন। অকালপ্রয়াত (আসলে শহীদ) এই শিল্পীকে কিছুটা নিকট থেকে দেখবার সুযোগ করে দিয়েছেন কাজী জাহিদুল হক ‘জহির রায়হানের আত্মকথা ও অন্যান্য রচনা’ নামের এই বইটির লেখাগুলো সংগ্রহ ও সম্পাদনা করে। জহির রায়হান ব্যক্তিগত সঞ্চয়ে বিশ্বাস করতেন না; আগাগোড়া ছিলেন তিনি সমাজতান্ত্রিক, সংরক্ষণ না করায় তাঁর অনেক লেখাই হারিয়ে গেছে। যে লেখাগুলো ছাপা হয়েছিল সেগুলোও ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। কাজী জাহিদুল হক সেগুলো খুঁজে বের করে তার এই বইতে উপস্থাপন করেছেন। সেই সঙ্গে সুলিখিত একটি ভ‚মিকা যুক্ত করে জহির রায়হান সম্পর্কে জরুরী তথ্যগুলো একত্র করে দিয়েছেন। এজন্য তিনি প্রশংসা পাবেন, যদিও প্রশংসার প্রত্যাশায় তিনি কাজটি করেননি; করেছেন অন্তর্গত তাগিদেই।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী (জন্ম. ১৯৩৬) পেশায় সাহিত্যের অধ্যাপক এবং অঙ্গীকারে লেখক। এই দুই সত্তার ভেতর হয়তো একটা দ্বন্দ্বও রয়েছে, তবে সেটা অবৈরী, মোটেই বৈরী স্বভাবের নয়। পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক, অবসরগ্রহণের পর ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রফেসর এমেরিটাস হিসাবে মনোনীত হয়েছেন। তিনি শিক্ষা লাভ করেছেন রাজশাহী, কলকাতা, ঢাকা এবং ইংল্যান্ডের লীডস ও লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে। লেখার কাজের পাশাপাশি তিনি ‘নতুন দিগন্ত’ নামে সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করছেন। তার গ্ৰন্থসংখ্যা আশির কাছাকাছি। তার অকালপ্রয়াত স্ত্রী ড. নাজমা জেসমিন চৌধুরীও লিখতেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন।