"বড়দের জন্য লেখা মঈনুল আহসান সাবেরের গল্পগুলো সাম্প্রতিক বাংলা সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য সংযোজন। কিন্তু ছোটদের জন্য তিনি যখন লেখেন, তখন তাঁর লেখাগুলো কেমন? ঐ যে- বাংলা সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য সংযোজন, এ কথাটা তাঁর ছোটদের জন্য লেখাগুলোর ক্ষেত্রেও খাটে। যেমন তাঁর ‘লিলিপুটরা বড় হবে’ কিংবা ‘সবচেয়ে সুন্দর’ বই দুটো বাংলা সাহিত্যে চিরকালের জন্য জায়গা করে নিয়েছে। 'তিন সাংবাদিক ভূত’-এর গল্প তিনটাই উল্লেখযোগ্য, আলাদাভাবে এটুকু জোর দিয়ে বলা যায়, ঐ বইয়ে অন্তর্ভুক্ত ‘হিমাংশু ও মুন্নার গল্প’র মতো আর একটি গল্পও বাংলা সাহিত্যে লেখা হয়নি। অল্প বয়সে লেখা প্রথমদিককার গল্পগুলো ছাড়া, তিনি ক্রমশ আশ্চর্যরকম পরিণত। অসাধারণ তাঁর বিষয় নির্বাচন। এ দেশে শিশু-কিশোরদের জন্য ভূত-প্রেত, গোয়েন্দা আর অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি এবং সায়েন্স ফিকশনের নামে সায়েন্স ফ্যান্টাসি যা ভূত-প্রেত বা রূপকথারই রকমফের- এসব লেখা হয় রাশি রাশি। এর বিপরীতে মঈনুল আহসান সাবেরের অভিনবত্ব- তাঁর লেখা কিশোর সাহিত্যের ভিন্নধারার কথা মনে করিয়ে দেয়, আমাদের কিশোর সাহিত্যের জন্য নতুন ধারার দিক নির্দেশ করে। এক আলোচক তাই ‘সবচেয়ে সুন্দর’ সম্পর্কে বলেন, ‘আমাদের কিশোর সাহিত্যকে একেবারেই ভিন্নতর প্রেক্ষিতে নিয়ে গেলেন লেখক। ...বইটি আমাদের কিশোরদের ভাবনা ও মনোজগতকে নতুনভাবে নির্মাণ করবে।’ তাঁর ‘লিলিপুটরা বড় হবে’ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘এ দেশের সাহিত্যে এ বই মাইলস্টোন হয়ে থাকবে।’ পৃথিবীখ্যাত এক লেখকের কথা আছে: আমরা যে মজার গল্পগুলোর দিকে যত বেশিক্ষণ ধরে যত বেশি যত্ন নিয়ে তাকাই, সেগুলো ততই দুঃখের হয়ে ধরা পড়ে। ‘তিন সাংবাদিক ভূত’ সম্পর্কে লিখতে গিয়ে সমালোচক ঐ প্রসঙ্গ টেনে এনে বলেন, ‘সাবেরের তিন সাংবাদিক ভূতও তেমন মজার গল্প, যা আমাদের যত না হাসায়, তারো চেয়ে বেশি কাঁদায়।’ সাবেরের সাম্প্রতিক সময়ের লেখাগুলোর বাইরে অন্য যে দুটো বই, তার একটি ‘আগামীদিনের গল্প’ হচ্ছে সমালোচকের ভাষায় ‘একটি সমাজমনস্ক বৈজ্ঞানিক দলিল’ আর ‘লালবাড়ির অদ্ভূত ভূত’ বইটির গল্পগুলো ‘কখনো প্রতীকী, কখনো মজার’। তবে এসব মন্তব্যের চেয়ে অনেক বেশি জরুরি হচ্ছে সাবেরের লেখাগুলো পড়ে নিয়ে নিজেই যাচাই করা। মঈনুল আহসান সাবেরের ভাষা গতিময়, ঝরঝরে এবং বিষয়োপযোগী। উপস্থাপনা স্বচ্ছ। তাঁর লেখা যেমন কিশোরদের নিয়ে কিশোরদের জন্য, তাদের চেতনার জীবনমুখী বিকাশের জন্য তেমনি বয়স্ক মননের জন্যও। তাঁর শ্রেষ্ঠ কিশোরগল্প সববয়সি পাঠকের কাছে প্রিয় হবে।"
মঈনুল আহসান সাবেরের জন্ম ঢাকায়। ২৬ মে ১৯৫৮। পৈতৃক ভিটে একদা বরিশাল ভাগ হয়ে যাওয়ার পর পিরােজপুর। দেশের বহু বহু জায়গায় যাওয়া হয়েছে, যাওয়া হয়নি ওই পিরােজপুর। বাবার ফেলে আসা ভূমি সাজানাে আছে সাবেরের কল্পনায়। জন্মের পর এই ঢাকা শহরেই বেড়ে ওঠা, শিক্ষা ও কর্মজীবন। সংসার জীবনও। যদিও এক সময় ইচ্ছা ছিল, থিতু হবেন না, পথে পথে থাকবেন, আজ এখানে তাে কাল ওখানে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে তিনিও সেই ওদের মতাে, যাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যত না টেনেছে, তার চেয়ে বেশি টেনেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চত্বর। বড়দের জন্য প্রথম লেখা ১৯৭৪-এ। প্রকাশিত হয়েছিলাে সে সময়কার সাপ্তাহিক বিচিত্রায়। তারপর ৪০ বছর ধরে এই একটিই কাজ, বিরতিসহ বিরতি ছাড়া। প্রথম বই গ্রল্পগ্রন্থ “পরাস্ত সহিস বেরিয়েছিল ১৯৮২ সালে। চাকরি না করে উপায় নেই। তাই করছেন, সাংবাদিকতা। এখন অবশ্য বেকার। বেকার থাকার অভিজ্ঞতা তার আছে। বাসনা বেকারই থেকে যাওয়ার। বেড়াতে ভালােবাসেন। একা থাকতেও পুরস্কার পেয়েছেন সামান্য কয়েকটি। বাপি শাহরিয়ার শিশুসাহিত্য পুরস্কার, হুমায়ূন কাদির সাহিত্য পুরস্কার, ফিলিপস পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার। স্ত্রী নাহিদ নিগার, দু পুত্র আহসান সেনান ও আহসান সাজিদকে নিয়ে তার সংসার।