লোকটার নাম ছিল পাঠক। সে বই পড়তে খুব ভালোবাসতো। একদিন সে অন্ধ হয়ে গেল। এখন সে বই পড়তে পারে না। তার অন্ধ চোখ দিয়ে পানি পড়ে। লোকটা একা একা গোপনে কাঁদে। একদিন সে বিজ্ঞাপন দিল। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়ার টাকা তার নেই। এক পুরনো বন্ধু তার জন্য বিজ্ঞাপন বানিয়ে দিল। সুন্দর বিজ্ঞাপন। কথাগুলো তার নিজের : একজন চলমান জীবন্ত লাঠি দরকার। লাঠিটিকে সুন্দরী ও শিক্ষিত হতে হবে। অন্ধের সহায় হতে চাইলে যোগাযোগ করুন... ইত্যাদি ইত্যাদি। বিজ্ঞাপনটিতে অন্ধকারে একটি সাদা উজ্জ্বল লাঠির ছবি। মনে হচ্ছে লাঠিটির থেকে আলো ছড়িয়ে পড়ছে। বিজ্ঞাপনটি বিনা পয়সায় ফেসবুকের নানা গ্রুপে আর পেইজে দেওয়া হলো। প্রথমে মনে হলো এ বিজ্ঞাপনটি একটি ফালতু ধারণা। কিন্তু ক্রমশ ফোন আসতে লাগল। বিচিত্র সেই সব ফোন। পাঠকের যেহেতু আপাতত কোনো কাজ নেই সে সবগুলো ফোন ধরল। সে যেহেতু কানে শোনে এবং গুছিয়েও কথা বলে সেহেতু সবগুলো ফোনের উত্তর মনোযোগ দিয়ে দিতে লাগল। লেখার সুযোগ নেই বলে সে ফোনকলগুলো রেকর্ড করে রাখল। দু—একটা কথোপকথন শোনা যেতে পারে। : আপনি কে বলছেন? : আমি পাঠক। : আপনিই বিজ্ঞাপনটি দিয়েছেন? : জি, আমিই বিজ্ঞাপনটি দিয়েছি? : আপনার কি মনে হয় না ব্যাপারটি হাস্যকর হয়েছে? : না, মনে হয় না। : আপনি আমাকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলুন। : বুঝিয়ে বলার তেমন কিছু নেই, তবু বলছি, শুনুন। আমি পাঠক। পড়তে ভালোবাসি। সম্প্রতি আমি অন্ধ হয়ে গেছি। আকস্মিক নয়। বহুদিন ধরেই গ্লুকোমাতে ভুগছিলাম। ধীরে ধীরে অন্ধ হলাম। কিন্তু বই পড়া ছাড়া আমার বেঁচে থাকা কঠিন। এমন একজন সঙ্গী আমার দরকার যে আমাকে বই পড়ে শোনাবে।
মুম রহমান। পুরাে নাম মুহম্মদ মজিবুর রহমান। জন্ম ২৭ মার্চ, ১৯৭১ সাল। বাবা : মাে. মুসলেহ উদ্দিন। মা : তাহেরুন্নেসা। দেশে এবং দেশের বাইরে উল্লেখযােগ্য পত্র-পত্রিকায় অসংখ্য গল্প-উপন্যাস-নাটক-প্রবন্ধ-অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি ব্যস্ত টিভি নাটক আর বিজ্ঞাপনের স্ক্রিপ্ট নিয়ে। প্রথম রচিত ও অভিনীত টিভি নাটক এক চিলতে আকাশ ১৯৮৮ সালে বিটিভিতে প্রচারিত । কাজ করেছেন মঞ্চ ও বেতারে। নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ থেকে নাট্য রচনায় এমএ । পত্র-পত্রিকা ও বিজ্ঞাপনী সংস্থায়ও কর্মরত ছিলেন । বর্তমানে ইংরেজি মাধ্যমের এক স্কুলে নাট্যশিক্ষক হিসাবে কর্মরত। সাকিরা পারভীনকে নিয়ে তৈরি করেছেন আর্ট জোন নামের সংস্থা; যেখানে নাট্যরচনা, আবৃত্তি, বনসাই তৈরির মতাে বিষয়ে ভিন্ন ধারার প্রশিক্ষণ কোর্স পরিচালনা করেন তিনি।