পৃথিবীতে মানুষের অবস্থান নির্ধারণে তিনটি মৌলিক একক রয়েছে। তাহল: সুখ, শান্তি ও সফলতা। আর এই তিনটি এককই হলো সুন্দর জীবনের মূল চাবিকাঠি। মজার ব্যাপার হলো, মৃত্যুর পরের অবস্থান বিবেচনার জন্যও এ তিনটি বিষয় প্রধান। সুখ মনোদৈহিক ব্যাপার। সুখ যতটা না মাথা বা জ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত, তারচেয়ে বেশি হৃদয় বা ভালোবাসার সাথে সম্পর্কিত। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি মানুষই আলাদা। আমাদের চাওয়াটা আমাদেরকেই নির্ধারণ করতে হবে। প্রতিদিন কিছু সময় নিজের সাথে কথা বলতে শিখতে হবে। একমাত্র মানুষই জীবনকে উপভোগ করে। অন্য প্রাণীরা তা পারে না। এমনকিছু করতে নেই যাতে কোনো আনন্দ নেই। গবেষণায় এসেছে, মানুষ কেরিয়ারকে উপভোগ করে, অথচ চাকরিকে বোঝা মনে করে। সে-ই বুদ্ধিমান, যে এমন জব করেÑযা তার কেরিয়ার। ধর্মবিহীন বিজ্ঞান মানুষের মানবিক উপকারে আসে না। অথচ পূর্বে মানুষ ভাবত, ধর্ম ও বিজ্ঞান পাশাপাশি চলতে পারে না। স্রষ্টার সাথে সম্পর্কহীন আত্মা অসুখী, অশান্ত। একটি সুন্দর জীবন গড়ার স্বপ্ন জেগেই দেখতে হয়। ঘুমিয়ে যা দেখা হয় তা দুঃস্বপ্ন। আসল স্বপ্ন আপনাকে ঘুমাতে দিবে না। জীবন হচ্ছে সময়ের একটা বাগান। সময়কে কোনোভাবে নষ্ট করতে নেই। শান্তির শুরু আমাদের অন্তর থেকে। প্রতিটি ব্যক্তি শান্তির প্রথম উপাদান। এভাবে ব্যক্তি, পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, এলাকা, গোষ্ঠী, দেশ এবং পুরো পৃথিবী তথা মহাবিশ্বের প্রতিটি স্তরেই শান্তি দরকার। যখন প্রতিটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে তাদের মত ও চিন্তা ভাবনা জাতি ও দেশের সব ক্ষেত্রেই প্রকাশ করতে পারে, নিজেকে ক্ষমতার একটা অংশ মনে করতে পারে, তখন রাজনৈতিক এবং জাতিগতভাবে নিজের মাঝে শান্তি অনুভব করে। শান্তি হচ্ছে সামাজিক বন্ধুত্ব এবং মমতা। এটা এমন এক অবস্থা, যেখানে সংঘাত এবং সংঘর্ষ অনুপস্থিত। শান্তির জন্য নিরাপত্তা এবং মানসিক সুস্থতা অপরিহার্য। কোথাও ন্যায়বিচার উঠে গেলে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার হলে, সেখানে শান্তির পরিসমাপ্তি ঘটে। মহান স্রষ্টার আদেশ হলো মানব আত্মা। অর্থাৎ আত্মা স্রষ্টার সাথে সম্পর্কযুক্ত। অতএব, আত্মা স্রষ্টার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করলেই শান্তি পেতে পারে। এজন্যই সকল ধর্মের মূলকথা হলো, স্রষ্টার স্মরণ মানেই আত্মার শান্তি। মানুষ স্রষ্টার স্মরণ ব্যতীত পরিপূর্ণ শান্তি পেতে পারে না। আমাদের সুখ, শান্তি ও সফলতার জন্য করণীয়, বর্জনীয়, অনুস্মরণীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে এ গ্রন্থে। ইতিহাসের সুখী, শান্তিপ্রিয় ও সফল মানুষগুলো শান্তি প্রতিষ্ঠায় যেসব তত্ত্ব, তথ্য, উপাত্ত দিয়ে গেছেন সেসব থেকে নিগূঢ় রহস্য, সূত্র তথা ব্যাখ্যা তুলে ধরা হবে এ গ্রন্থে। আশা করা যায়, পাঠক উপকৃত ও চমৎকৃত হবেন এবং নতুন করে জীবন নিয়ে ভাবতে পারবেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এবং সভ্যতার বিকাশে যেসব মানুষ অবদান রেখেছেন, সুখ ও শান্তি উপভোগ করেছেন, সফল হয়েছেন, অমরত্ব অর্জন করেছেনÑ এককথায় যারা নিজের জন্য একটি সুন্দর ও সার্থক জীবন গড়তে সমর্থ হয়েছেন তাদের জীবন, আদর্শ, দর্শন, চিন্তাচেতনা, লেখা, বক্তব্য, গবেষণা পর্যালোচনা করা হয়েছে এ গ্রন্থে। মহামানব ও সফল মানবদের সফলতার গোপন তথ্য, সূত্র ও বাণী নিয়েও পর্যাপ্ত গবেষণা ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। গবেষণার কষ্টি পাথরে বিচার বিশ্লেষণ করেই ‘এসো গড়ি সুন্দর জীবন’ বইয়ের পাণ্ডুলিপির জন্য প্রয়োজনীয় সুখ, শান্তি ও সফলতার গোপন সূত্রগুলো বাছাই করেছেন। আশারাখি বইটি পাঠে সর্বশ্রেণির পাঠক উপকৃত হবেন। ড. ইবনে আশরাফ