প্রধান দুটি ধর্ম সম্প্রদায়ে বিভক্ত একটা মানবগোষ্ঠী মিলেমিশে সুখে শান্তিতে বাস করেছে এর নজির প্রাচীনকালে থাকলেও আধুনিক সমাজে প্রায় নেই বললেই চলে। তবু বাংলা সাহিত্যে হিন্দু-মুসলমান মিলে-মিশে থাকুক এর একটা ক্যাম্পেইন রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল দুজনেই করেছেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর গদ্য প্রবন্ধগুলোতে বিপুল পরিমাণে এর প্রায়োগিক চেষ্টা চালিয়েছেন আর নজরুল সাহিত্যজীবনের পুরোটা উৎসর্গ করেছেন একাজে বলা যায়। খুব যে সফল দুজন হয়েছেন এমনটা নয়। ধ্রুপদী মার্কসবাদীদের চেষ্টাও ব্যর্থ। মোস্তফা তারিকুল আহসান যে উপন্যাসটা লিখেছেন তার বিষয় হিন্দু-মুসলমানে বিবাহ। পাত্রপাত্রী দুজন শতাব্দী ও রাশেদ মধ্যবর্গের। দুজনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। দুইজনই অভিজাত মধ্যবর্গের। শ্রেণিচরিত্রে দুজনের মধ্যে মিল থাকলেও তাদের জীবন 'সুখের সদন' হয়ে ওঠে এমন নয়। এমন হওয়ার কথাও নয়। সন্তান হবার পর সন্তানের পরিচয় নিয়ে দুজনের দ্বন্দ্ব আরও তীব্র হয়ে ওঠে। মোস্তফা তারিকুল আহসান চেষ্টা করেছেন বিষয়টার একটা ইতিবাচক সমাধান টেনে আনতে। কিন্তু একটা সময় যা হয় ভালো উপন্যাসের ক্ষেত্রে বাখতিন যেমনটা বলেন 'চরিত্র বাহাদুররা' আর লেখকের শাসন মানতে চায় না। বেরিয়ে আসে নিজেদের সাংস্কৃতিক অস্তিত্ব নিয়ে। 'পলাশের নেশা' উপন্যাসেও তাই হয়েছে। এজন্যেই উপন্যাসটি মূল্যবান প্রকাশনা আমাদের সবার কাছে। এ উপন্যাস মূল্যবান উপস্থাপনের কৌশলে, উত্তমপুরুষের বহুমুখী বয়ানে আর বাংলাদেশের শিক্ষিত মধ্যবর্গের সংস্কৃতির পরিশীলিত স্বরূপটা ধরার চেষ্টায়।