পাকিস্তানের গ্রামসি বলা হয় তাঁকে। পাকিস্তানের প্রগতিশীল মনোভাব গঠনে যাঁদের চিন্তাশীল ও মননশীল গদ্য বিশেষ ভূমিকা রেখেছে তাঁদের অন্যতম সৈয়দ সিবতে হাসান (১৯১৬-১৯৮৬)। তাঁর ‘মুসা সে মার্কস তক’, ‘মার্কস ঔর মাশরিক’, ‘মাজি কি মাজার’ এবং ‘দ্য ব্যাটল অব আইডিয়াস ইন পাকিস্তান’— দারুণ সব গ্রন্থ। তাঁর গদ্য এমন দারুণ যে পড়তে গেলে চুম্বকের মতো টানতে থাকে। জন্ম ভারতের উত্তর প্রদেশে। পড়াশোনা করেছেল আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। কলাম্বিয়ায় পড়ার সময় কমিউনিস্ট হওয়ার কারণে বহিষ্কৃত হন। দেশভাগের পর তিনি চলে যান পাকিস্তানের লাহোরে। ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ, সাজ্জাদ জহির, খাজা আহমেদ আব্বাস, সাংবাদিক হামিদ আখতার, উর্দু সাহিত্যের প্রখ্যাত পণ্ডিত রালফ হাসান, চিত্রশিল্পী শাকির আলি, তখনকার শিল্পসাহিত্যের শীর্ষস্থানীয় অনেকের সঙ্গেই ছিল সিবতে হাসানের গভীর বন্ধুত্ব। পন্ডিত, সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক সংগ্রামী সিবতে হাসানের অনবদ্য রচনার একটি ‘দ্য ব্যাটল অব আইডিয়াস ইন পাকিস্তান’। পাকিস্তানের মতবাদের দ্বন্দ্বের সূত্র ধরে কথা বলতে গিয়ে তিনি বিশ্বসভ্যতার ইতিহাস ও দর্শনের দ্বন্দ্বের একটা দারুণ চিত্র তুলে ধরেছেন। গ্রামসি শুধু ইতিহাস ও মার্কবাদের চর্চার মধ্য দিয়ে যাননি, ইতালির প্রেক্ষাপটে নতুন চিন্তায় মার্কসবাদকে সমৃদ্ধ করেছেন। পাকিস্তানের প্রেক্ষাপটে একই কাজ করেছেন সিবতে হাসান। গ্রামসির মতোই তাঁকেও যেতে হয়েছে জেল-জুলুমের ভেতর দিয়ে। পাকিস্তানের মতবাদের দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে যেসব চিন্তা রেখেছেন সিবতে হাসান, বাংলাদেশের পাঠকদের জন্যও, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও প্রযোজ্য। বাংলাদেশের মতবাদের দ্বন্দ্ব বোঝার জন্যও এই বই চমৎকার। সিবতে হাসানের বই ‘দ্য ব্যাটল অব আইডিয়াস ইন পাকিস্তান’র কয়েকটি অধ্যায় নিয়ে অনুবাদ গ্রন্থ ‘প্রাচীন সমাজে ধর্মনিরপেক্ষতা’। ‘প্রাচীন সমাজে ধর্মনিরপেক্ষতা’র স্বরূপ বোঝার জন্য আমার মনে হয়েছে এর চেয়ে ভালো লেখা আর হয় না। বাংলাভাষায় সিবতে হাসানের লেখার এটাই প্রথম অনুবাদ।