ফ্ল্যাপে লিখা কথা আবুল হাসানের এই অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপির স্বভাবতই শিরোনাম নেই কোনো। আমরা এই পাণ্ডুলিপির অন্তর্ভুক্ত একটি কবিতার নামানুসারে, পাণ্ডুলিপিটি যখন গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হচ্ছে, নাম রাখলাম ,মেঘের আকাশ আলোর সূর্য। যা ছিল সাধারণের অগোচরে আচ্ছাদিত, তা এখন হয়ে উঠকু দৌদ্রকরোজ্জ্বল।
সন্দেহ নেই : এই বই এর কবিতা যখন লিখছেন তখনই সাবালক হয়ে উঠেছেন, তিন রকম ছন্দই তাঁর করায়ত্ত, মানুষ প্রকৃতি প্রেম দেশপ্রেম-সবই তখনই সূর্যের ডানায় ভেসে যাচ্ছে। হাসান হয়তো তখন তরুণকিশোর বা সদ্যুযুবা, ১৯৬৬ সালে এই পাণ্ডুলিপি আবুল হাসান আর একজন তরুণকে উপহার দিয়েছিলেন, কিন্তু তখনই কবিতা কুঁড়ি থেকে ফুলে উন্মীলিত হয়ে উঠেছে। আবুল হাসানের এই ডায়েরির অগোচরে কবিতাগুলো প্রকাশিত হয়ে এখন এসব জ্যোৎস্না-রৌদ্র-স্বপ্ন-করোজ্জ্বলতায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠুক।
সূচিপত্র * পাখিরে তুই * যুগের আরাব * শিল্প ও শিল্পী * আবার ডাকি * প্রত্যুৎপন্নে * রঙ্গন * প্রায়শ্চিত্তে মরলতা * নিজেই ভেবেছি, আহা! * আর না জানিলে * কোমল গান্ধার * অন্বিষ্ট * পৃথুল ইচ্ছায় * অপর পিঠ * রূপের অরূপ * মহাজন * নদীর বুকের সব ঢেউ * আহা কবে যে! * তার অন্তরঙ্গতায় * হায়রে দেয়াল * উজ্জীবন * পল্লব * তা তুমিই শেখালে * মিশ্রণের সুখ * খবর * মূর্তিহীন হারানোর ধ্যান * উদ্দিষ্ট * অতীতের মমীরা ঘুমায় * প্রদ্যুতে * ভেবেছি বালাই নেই * মেঘের আকাশ/আলোর সূর্য * বরিস পাস্তারনক কে * চিঠি * রক্তের মুখ * এ আমার দেশ * গতির আড়ালে * প্রিয়তমাকে * কোন এক বয়সী জিজ্ঞাসায় * উপাখ্যান * অকথিত * উন্মন দিগন্ত * আকাঙ্ক্ষার পলি * প্রীতির পলাশ * যখন স্বদেশে শুনি * সাধ হয়
আবুল হাসান ১৯৪৭ সালের ২৭ আগস্ট গােপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়ার বর্নি গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস পিরােজপুর জেলার নাজিরপুরের ঝনঝনিয়া গ্রামে। তিনি ঢাকার আরমানিটোলা সরকারি বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৩ সালে এসএসসি এবং ১৯৬৫ সালে। বরিশালের ব্রজমােহন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে ভর্তি হলেও মধ্যপথে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশােনার ইতি ঘটান। ১৯৬৯ সালে দৈনিক ইত্তেফাকের বার্তা বিভাগে যােগদানের মাধ্যমে শুরু হয় তার কর্মজীবন । পরবর্তীকালে দৈনিক গণবাংলা (১৯৭২-১৯৭৩), দৈনিক জনপদ (১৯৭৩-৭৪) পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আবুল হাসানের প্রকাশিত গ্রন্থ : রাজা যায় রাজা আসে (১৯৭২), যে তুমি হরণ করাে (১৯৭৪), পৃথক পালঙ্ক (১৯৭৫)। তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয় ‘আবুল হাসানের অগ্রন্থিত কবিতা' (১৯৮৫), কাব্যনাট্য ‘ওরা কয়েকজন (১৯৮৮), আবুল হাসানের গল্প (১৯৯০)। জীবদ্দশায় আবুল হাসান উল্লেখযােগ্য কোনাে পুরস্কার পাননি। মরণােত্তর পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭৫), একুশে পদক (১৯৮২)। আবুল হাসান ১৯৭৪ সালের ১৯ নভেম্বর জার্মানির বার্লিন যান চিকিৎসার জন্য, ফিরে আসেন ১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে। ১৯৭৫ সালের ২৬ নভেম্বর মাত্র আটাশ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।