Flap Page-1 ডাক্তারী বিদ্যার ইন্টার্নি শেষ করেই মৌটুসী ছুটির দিনগুলো কাটানোর জন্য তার নানার গ্রাম রূপডাঙ্গায় বেড়াতে আসে। কিন্তু মৌটুসীর কাছে প্রতিদিন রূপডাঙ্গা যেভাবে নিত্য-নতুনতায় তার অনিন্দ্যলোক নিয়ে উদ্ভাসিত ঠিক সেভাবেই মুন্তাসির; ডাক্তারি বিদ্যা শেষ করার আগেই যে লন্ডন থেকে পালিয়েছে, রূপডাঙ্গার সবাই যাকে মায়াভরে ‘মন’ সম্বোধনে ডাকে, প্রতিনিয়ত তার নিকট রহস্যময় এক চরিত্র। যে তরুণ প্রতিদিন ভোরে নেপোলিয়ন নামের ঘোড়াকে নিয়ে হর্স-রাইড করে উন্মত্ত গতিতে। প্রথম প্রথম ডাক্তার না হয়ে ওঠা ‘মন’ নামের এই ডাক্তারের প্রতি রূপডাঙ্গাবাসীর আস্থায় বিরক্ত হয়ে উঠলেও দিন যত যায় ‘মন’ নামের তরুণটির প্রাণময়তা, তার গভীর-শান্ত অথচ চঞ্চল হৃদয়টা কেন যেন দখল করতে থাকে মৌটুসীর ভাবনালোক। সব রহস্য উন্মোচিত হয় যখন আসমা নামের গ্রামের এক গর্ভবতী মেয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হয় । দীর্ঘ আট ঘন্টার অপারেশনে ‘মন’ তার ঐশ্বরিক দক্ষতায় আসমার জীবনের কাছাকাছি নেমে আসা মৃত্যুদূতের সাথে যুদ্ধে নামে আর ভিজিয়ে দেয় মৌটুসীর মনের প্রান্তর।
তার কয়েকদিন পর মন দুদিনের জন্য শহরে গেলে মৌটুসী তিশকা ভাবির সহায়তায় মৌটুসী প্রবেশ করে ‘মন’ এর রহস্যময় ঘরে। এই ঘরে এসেই মৌটুসী পেয়ে যায় বিমান দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া তার মাকে লেখা ‘মন’ এর চিঠি। মৌটুসীর কাছে একে একে উন্মোচিত হয় মন নামের ছেলেটির জীবনের কাছাকাছি নেমে আসা দুঃখভরা মায়াময় এক রহস্যলোক। মৌটুসীর নেত্রকোনায় যে ঝাপসা অশ্রুবিন্দু তার সামনে শুধু ভাসতে থাকে মন-এর প্রিয়মুখ। মৌটুসী কি ছেড়ে আসবে অনিন্দ্য প্রকৃতি আর কুয়াশার চাদর মোড়া রূপডাঙ্গা আর তার প্রিয় মন কে? এই গল্পগ্রন্থের ‘রূপডাঙ্গার সন্ধানে’ গল্পের মতো অন্যান্য গল্পগুলো পাঠক মননে আলো জ্বালবে , মিশে থাকবে তাদের প্রিয় অনুভবে । অনবদ্য এই গল্পগুলো আর গল্পের চরিত্রগুলোকে যে ভোলা যায় না!
Flap Page-2( with photo of writer) ‘ধূসর স্বপ্নের সাসান্দ্রা’ উপন্যাস সৃষ্টিলগ্নে কোন একটা গল্প লিখে সম্পন্ন করার মানসে কাজী রাফি ‘রূপডাঙ্গার সন্ধানে’ নামে প্রেমের গল্পটি লিখেছিলেন। ‘রূপডাঙ্গার সন্ধানে’ ২০০৫ সালে লেখা কাজী রাফির প্রথম গল্প। একজন লেখকের প্রথম লেখা গল্প, এর ভাষা, চরিত্রায়ন, মানব-মানবীর চিরন্তন প্রেম-রসায়ন, সর্বোপরি গল্পের ভেতরে গল্পকে আড়াল করে একেবারেই আলাদা ধাচে লেখা গল্পটি পাঠক হয়তো কোনোদিন ভুলবে না। তার গল্প-উপন্যাসে ব্যবহৃত শব্দের ঝরনাধারাগুলো মানব মননের সূক্ষ্ম আর চিরন্তন অনুভবকে পাঠকের অন্তরবীণায় প্রোথিত করতে করতে পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়। পাঠককে নিয়ে যায় গভীর, গহন আর রহস্যময় এক জগতে। কাজী রাফির ভাষা স্বতন্ত্র এবং একান্তই তার নিজস্ব। ভাষার এই স্বতন্ত্রতা বজায় রেখে প্রতিটি গল্পের কাঠামো বুননে তিনি আলাদা হয়ে যান। কাজী রাফির প্রায় সব সৃষ্টি শৈলীতে যে গতিময় সুর ছড়ানো অথবা ‘মাটির সাদা ঘ্রাণ লুকানো, জীবনকে দেখার যে গভীর দর্শন ব্যপ্ত -তার প্রতীক এবং প্রকরণ অনবদ্য । তাই সাদা-মাটা ভাষায় বলা তার গল্প বা উপন্যাসের কাছে পাঠককে বারবার ফিরে আসতে হয়। কাজী রাফির লেখার বিষয়বস্তু ছোটগল্প এবং উপন্যাস। প্রথম উপন্যাস (প্রকাশনায় পঞ্চম) ‘ধূসর স্বপ্নের সাসান্দ্রা’র জন্য পেয়েছেন ‘এইচ এস বি সি-কালি ও কলম পুরুস্কার-১০’ । উপন্যাস এবং ছোটগল্পে অসামান্য অবদানের জন্য পেয়েছেন ‘নির্ণয় স্বর্ণপদক-১৩’।
কথাসাহিত্যিক কাজী রাফি ১৯৭৫ সালের ২২ নভেম্বর বগুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম কাজী রইচ উদ্দীন এবং মাতার নাম ফিরোজা বেগম। তিনি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ বগুড়া থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে গ্রাজুয়েশনসহ কমিশনপ্রাপ্ত হন । পরবর্তীতে তিনি নিজ ইংরেজিতে স্নাতক (সম্মান) সম্পন্ন করেন। ‘ধূসর স্বপ্নের সাসান্দ্রা’ উপন্যাস তার লেখা প্রথম উপন্যাস। প্রথম উপন্যাসেই তিনি পাঠক এবং বোদ্ধাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে ‘ধূসর স্বপ্নের সাসান্দ্রা’ , ‘ত্রিমোহিনী’ , রূপডাঙ্গার সন্ধানে’ , ‘পাসওয়ার্ড’ , ‘রংধনুর সাঁকো’, ‘লে জোঁ নদীর বাঁকে’, নিঃসঙ্গতার নগ্ন খোলস’, অরোরার আঙুল’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য । প্রথম উপন্যাস ‘ধূসর স্বপ্নের সাসান্দ্রা’র জন্য পেয়েছেন ‘এইচএসবিসি-কালি ও কলম পুরস্কার-১০’ এবং ‘এম এস ক্রিয়েশন (শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ) সম্মাননা’ । উপন্যাস এবং ছোটগল্পে অসামান্য অবদানের জন্য পেয়েছেন ‘নির্ণয় স্বর্ণপদক-২০১৩ ।