পলাশীর মাঠ থেকে পঞ্চাশ মাইল পশ্চিমে নিম্ন বাংলার সীমান্তে দুটি প্রাচীন রাজ্যের নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায়। এই রাজ্য দুটি মধ্য ভারতের উচ্চ মালভূমি ও গঙ্গা নদীর উপত্যকার মধ্যবর্তী এলাকার বরাবর অবস্থিত। এখানকার সমতলভূমি উঁচু, তবে ছোটোখাটো পাহাড়-পর্বত ও উঁচু-নিচু জায়গায়ও আছে। পশ্চিমে একটি বড়ো পাহাড় আছে এবং তার চূড়া পর্যন্ত লতাগুল্মে ঢাকা। ফুলে-পাতায় পরিপূর্ণ লতাগুলো এমন ঘন ও জমাট হয়ে জন্মায় যে, তাদের চাপে মূল লতাগুলো পর্যন্ত মরে যায়। তারপর এই শুকনো ও সতেজ লতাগুলো পরস্পরের সঙ্গে এমনভাবে জড়িয়ে যায় যে, তখন আর তার মধ্য দিয়ে কিছুই ঢুকতে পারে না। এখানে সেখানে যে দু'একটি পাহাড় আছে, সেগুলোকে অনেকটা দুর্গের মতো মনে হয়। কারণ পাহাড়গুলোর চূড়া সরু নয়, সমতল। নদীর উপকূলে লতাগুল্মে আচ্ছাদিত ছোটো ছোটো খাল থেকে ঘোলাপানির স্রোত নদীতে এসে পড়ে। এখানকার নদীগুলোতে এক মৌসুমে আধ মাইল চওড়া ও কুড়ি ফুট গভীর স্রোত বয়ে যায়, আবার অন্য মৌসুমে বিস্তৃত বালুচরের মাঝখানে পানির ধারা সুতোর মতো সরু হয়ে যায়। সমতল ভূমিতে ঘন জঙ্গল আছে। সেখানে নানা প্রকার বন্যজন্তু বাস করে। জঙ্গলের পাশে কচি ঘাসে পরিপূর্ণ মনোরম চারণভূমিতে ছাগল-গরুর সমাবেশ ঘটে। সমতল ভূমির যতোই পূর্বদিকে যাওয়া যায় ততোই ফলের বাগান, উজ্জ্বল সবুজ ধানের ক্ষেত এবং সমৃদ্ধিশালী গ্রাম চোখে পড়ে।