"অশনি সংকেত" বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: ১৯৪৩ সাল। বাংলার ইতিহাসে কুখ্যাত, ১৭৫৭'র পরে সবচেয়ে বড় মন্বন্তরের কারণে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। জাপানি সেনারা দখল করে নিয়েছে ব্রহ্মদেশ মায়ানমার। সিঙ্গাপুরের মতো মায়ানমারেও ইংরেজ শক্তির পরাজয় সুনিশ্চিত। মায়ানমার হয়ে শত্রুসেনারা যদি ভারতবর্ষ আক্রমণ করে? প্রধানমন্ত্রী ডব্লিউ চার্চিল নিলেন এক ভয়ংকর পরিকল্পনা— স্কর্চড আর্থ (Scorched Earth); শত্রুকে ঘায়েল করতে হবে এমন সব জিনিসকে ধ্বংস করে, যা তাদের জন্য দরকারি, তাদের জন্য অপরিহার্য। এরই অংশ হিসেবে ব্রিটিশ প্রশাসন নৌব্যবস্থা বন্ধ করে দিল। ভেঙে পড়ল কৃষি যোগাযোগ। সেনাসদস্যদের জন্য সকল জায়গা থেকে মজুদ করা হতে থাকল খাদ্যশস্য। উপরন্তু জাপানি সৈন্যরা যাতে কোনোভাবে চালের নাগাল না পায়, সেজন্য বাজেয়াপ্ত করা হলো গুদামগুলো। চাল আমদানি বন্ধ হয়ে গেলো বার্মা থেকে। খাদ্যদ্রব্যের দাম হু হু করে বাড়তে থাকলো বাজারে, গ্রামাঞ্চলে দেখা দিল নিদারুণ খাদ্যসংকট। সর্বোপরি, বাংলার ভাগ্যাকাশে দেখা দিলো দুর্ভিক্ষের ঘনঘটা। খাবারের হাহাকারে প্রাণ গেলো প্রায় পঞ্চাশ লাখ মানুষের; পথে প্রান্তরে লুটিয়ে পড়তে লাগল না খেতে পাওয়া হাড্ডিসার মানবদেহ। দুর্ভিক্ষের এই ভয়াল প্রেক্ষাপটে গ্রামজীবনের করুণ আখ্যান নিয়ে রচিত হয়েছে অমর কথাশিল্পী বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'অশনি সংকেত'। ১৯৪৩ এর দূর্ভিক্ষের ওই প্রেক্ষাপটে রচিত এই উপন্যাসের বিস্তারিত জানতে বইটি পড়ে ফেলুন....
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ কিছু কালজয়ী উপন্যাস রচনার মাধ্যমে জয় করে নিয়েছেন বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের হৃদয়। শুধু উপন্যাসই নয়, এর পাশাপাশি তিনি রচনা করেছেন বিভিন্ন ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, দিনলিপি ইত্যাদি। প্রখ্যাত এই সাহিত্যিক ১৮৯৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগণা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন, তবে তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল যশোর জেলায়। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র হিসেবে তিনি শিক্ষাজীবন অতিবাহিত করেন, যার প্রমাণ পাওয়া যায় তাঁর প্রথম বিভাগে এনট্রান্স ও আইএ পাশ করার মাধ্যমে। এমনকি তিনি কলকাতার রিপন কলেজ থেকে ডিস্টিংশনসহ বিএ পাশ করেন। সাহিত্য রচনার পাশাপশি তিনি শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন অতিবাহিত করেন। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর বই সমূহ এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো 'পথের পাঁচালী', যা দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হওয়ার মাধ্যমে। এই উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণ করে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় অর্জন করেছেন অশেষ সম্মাননা। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর বই এর মধ্যে আরো উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো 'আরণ্যক', 'অপরাজিত', 'ইছামতি', 'আদর্শ হিন্দু হোটেল', 'দেবযান' ইত্যাদি উপন্যাস, এবং 'মৌরীফুল', 'কিন্নর দল', 'মেঘমল্লার' ইত্যাদি গল্পসংকলন। ১০ খণ্ডে সমাপ্ত ‘বিভূতি রচনাবলী’ হলো বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর বই সমগ্র, যেখানে প্রায় সাড়ে ছ’হাজার পৃষ্ঠায় স্থান পেয়েছে তার যাবতীয় রচনাবলী। খ্যাতিমান এই সাহিত্যিক ১৯৫০ সালের ১ নভেম্বর বিহারের ঘাটশিলায় মৃত্যুবরণ করেন। সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি মরণোত্তর 'রবীন্দ্র পুরস্কারে' ভূষিত হন।