গুলশানের এক ছাদ রেস্তোরাঁয় তাজিন, মাহিম, সুমন, আসিফ আর সুমি এসেছে। উপলক্ষ্য পুরোনো বস “মধুর হাঁড়ি”র বিদায় উদযাপন। আড্ডা গল্পে সুমন জানাল নতুন বসের নাম “শাহেদ আহমেদ”। হঠাৎ গলায় কিছু আটকে, কাশতে কাশতে তাজিনের চোখে পানি। মাহিম অবাক চোখে তাকাল, “চেনো নাকি? বিষম খেলে যে!” তাজিন দ্রুত মাথা নাড়ল। সত্যিই কি তাজিন চেনে শাহেদ আহমেদকে?
নব্বই দশকের এক প্রথম ফাল্গুনের দিন। ক্লাসের “আনলাকি থার্টিন” দলের মেয়েদের পরনে শাড়ি। বাধ্য হয়ে ছেলেদেরও পরতে হয়েছে পাঞ্জাবি। ক্লাস শেষে সবার গন্তব্য বইমেলা। ফুটপাত থেকে মেয়েরা কিনছে মাটির গয়না, চুড়ি, ছেলেরা ডুগডুগি বাজিয়ে তাগাদায় ব্যস্ত। বাসন্তী রঙে রঙিন বইমেলা প্রাঙ্গণ। স্টলে স্টলে ঘুরে বই দেখা, বই কেনা, সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় শুরু করা উচ্ছ্বল তারুণ্যে ভরপুর ইফতি, রং, পলাশ, বন্যা, তুলি, যেন একেকটা প্রজাপতি। পড়াশোনা, ক্যারিয়ার, বন্ধুত্ব, আর ভবিষ্যতের স্বপ্নে বিভোর! নিজেকে গড়ার ফাঁকে, কেউ প্রেমে পড়ে। কারও মাথায় প্রিয়জনের দায়িত্ব নেবার প্রত্যয়। মুক্ত আকাশে ডানা মেলার অপেক্ষায় একঝাঁক উদ্ধত যৌবন। অথচ যেদিন ডানা মেলার সময় হলো, সেদিন কেন সবার রং হারিয়ে গেল?
দুটি ভিন্ন সময়রেখা, একটি আবর্তিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে, ক্লাসে কিংবা ক্যান্টিনে, অন্যটি ঘুরে বেড়ায় অফিসের মিটিং থেকে কিউবে। তার মাঝেই পরিবার, বন্ধুত্ব, সব ছাপিয়ে ওঠে ভালোবাসা। এ গল্প নিজেকে ভালোবাসার, আছে নর-নারীর চিরন্তন ভালোবাসা, বাবা-মা-সন্তানের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, ভাই-বোনের শর্তহীন, কিংবা বন্ধুত্বের নির্ভরতার ভালোবাসা, আছে সহকর্মী ও কাজের প্রতি ভালোবাসা। কোনটা অনুরণন তোলে মস্তিস্কে, কোনটা সৃষ্টি করে হৃদয়ে অনুনাদ। জীবনের ক্যানভাসে নানা রঙের তুলিতে আঁকা হতে থাকে একটি সম্পূর্ণ পরিশুদ্ধ ভালোবাসার দৃশ্যকল্প।