বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে নয় মাসের এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত এবং দুই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে এসেছে এ স্বাধীনতা। স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা ১৯৭১ সালের ২৫মার্চ হলেও এর পটভূমি কিন্তু তৈরি হয়েছিলো অনেক আগে। ১৯৪৭ সালের পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই শুরু হয়েছিলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলন। স্বাধীনতা আন্দোলনের অংশ হিসেবেই ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন হয়েছে। ১৯৬৬ সালে হয়েছে ছয়দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালে হয়েছে গণ-অভ্যুত্থান। এসব আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। দেশের বীর সন্তানেরা লড়াই করে ছিনিয়ে এনেছে রক্তমাখা লাল সূর্যের পতাকা বাহী আমাদের স্বাধীনতা। যুদ্ধদিনের সেইসব গৌরব-গাঁথা ইতিহাস নতুন প্রজন্ম এবং আগামী প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করার বিষয়টি খুবই জরুরি। যুদ্ধের বীরত্ব গাঁথা প্রতিটি উপাদান আমাদের ইতিহাসের অমূল্য সম্পদ। তবে সুপরিকল্পিত ভাবে গবেষণার মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনযোদ্ধাদের বীরগাঁথা ও যুদ্ধের বিবরণ লিপিবদ্ধ ও সংরক্ষণ তরুণ প্রজন্ম ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একান্ত প্রয়োজন। মুক্তিযুদ্ধের শেকড়ের সন্ধানে সরেজমিনে যুদ্ধক্ষেত্র পরিদর্শন ও সঠিক তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করেছি। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমাদের ইতিহাস সাহিত্য ও সংস্কৃতি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক লেখালেখি হয়েছে। যতই এ নিয়ে গবেষণা ততই নতুন তথ্য বেড়িয়ে আসছে। ইতিহাস রচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সময় সাপেক্ষ ব্যপার। মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিলো সেক্টর ভিত্তিক। আমাকে ঝালকাঠি জেলার চারটি উপজেলাকে আলাদা করতে ক্ষানিকটা বেগ পেতে হয়েছে। গ্রন্থ’টিতে তরুন প্রজন্ম এবং আগামী প্রজন্মের জন্য সত্য ঘটনা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। ভবিষ্যতের কোন গবেষক বা ইতিহাসবিদ এ গ্রন্থে তথ্যে ভুলভ্রান্তি থাকলে তা পরিবর্তন করে সত্যকে তুলে ধরতে পারবেন। সঠিক ইতিহাস জানার জন্য তথ্যনির্ভর গ্রন্থ প্রকাশ করা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একান্ত প্রয়োজন। জেলার মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সাক্ষাতকার নেয়া সম্ভব হয়নি কারণ তাঁরা এলাকায় বাস করেণ না। চেষ্টা করেও নানা সীমাবদ্ধতার কারণে যোগাযোগ করতে পারিনি এ জন্য দুঃখিত। মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর যোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। গ্রন্থটি লিখতে আমাকে চারটি উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের যাঁরা সহায়তা করেছেন, তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আশা করছি নতুন প্রজন্ম প্রকৃত ইতিহাস জানতে এ গ্রন্থটি সহায়ক হিসেবে গুরুত্ব পাবে।
কবি মাহমুদা খানম। জন্ম, ১৫ জুন ১৯৬৮ ঝালকাঠি জেলার রাজাপুরে। শিক্ষাগত যােগ্যতা এম.এ এবং সি ইন এড, বিএড, এম এড। পেশাগতভাবে শিক্ষক হলেও জড়িত আছেন বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে। স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বসহ বিভিন্ন সংগঠন প্রধানের দায়িত্ব অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে পালন করেন। দিনমান এতাে কাজের মধ্যে যিনি ডুবে থাকেন শুধু কাজ আর কাজ নিয়ে। কী করে নিজের স্কুলকে আরও একটু গতিশীল করা যায় অথবা এ স্কুলের শিক্ষার্থীদের সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী হিসেবে অন্য শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতিযােগিতায় অনন্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়- সেই বিষয়টিই তার একান্ত নিজের জগৎ। এ জগতে বাস করেন দিনমান। গভীর রাতে নিমগ্ন হন তিনি অন্য কিছু নিয়ে। সেটি তার আপন নিমগ্নতার ভুবন।। একান্ত নিমগ্নতায় তিনি লিখে চলেন কবিতা। একজন অঙ্কন শিল্পী যেমন তার কল্পিত বিষয়বস্তু রঙ-তুলির ছোঁয়ায় রাঙিয়ে তােলেন, তেমনি একজন কবিও তার ভাবনার বিষয়বস্তু প্রতিভাসিত করেন শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে। সহজ-সরল ছন্দমাত্রা আর অক্ষরবৃত্তের দ্যোতানায় কবিতাগুলােকে শিল্পময় করেন। তেমনি কবি মাহমুদা খানমও কল্পনার রঙ আর শব্দ ব্যবহারের উপস্থাপনায় তার কবিতাগুলােকে অর্থবহ করেছেন নিজস্ব ভঙ্গিমায় । আপন ভাবনায় তিনি, যে কবিতাগুলাে লিখেছেন। তাতে উঠে এসেছে সমাজের বিভিন্ন দিক এবং সুনিপুণ চিত্রকল্প। তার প্রেমের কবিতাগুলাে রােমান্টিকতার নান্দনিকতায় ভরপুর । সহজ-সরল শব্দ গাঁথুনিতে কবিতাগুলাের নিজস্ব আঙ্গিক তৈরি হয়েছে।