‘দশটি বেসামরিক প্রবন্ধ’, খুঁজে ভেবে এই নামটি স্থির করতে মোটামুটি একটি প্রবন্ধ রচনার মতো দীর্ঘ সময় হাপিস হয়ে গেছে। ‘সভাপতি মাও সেতুঙের ছয়টি সামরিক প্রবন্ধ’ (নাকি দশটি প্রবন্ধ?) এই নামে প্লাস্টিকের লাল মলাটের একটা বই পড়েছিলাম- তা কম করে চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ বছর আগে। এতোদিন পর সেই নামটি কী আমার অন্তঃকরণে প্রভাবক হয়ে দোলা জাগালো? নিজের কাছে নিজেরই এই প্রশ্নের উত্তর ভালো করে খুঁজিনি। তবে এই সুযোগে ‘সামরিক’ শব্দটির ওপর যে একটা নেতিবাচক মনোভঙ্গি ব্যক্ত হয়েছে, সেই দ্যোতনাটি আমাকে পলকে দখল করে নেয় এবং নামকরণের মধ্যে যুদ্ধকে অসমর্থন করার এই বিষয়টি যেনো অগ্রন্থিত একটা প্রবন্ধের প্রতিপাদ্য হয়ে উঠেছে। অবশ্যি কথা আছে- শব্দটি যদি মানবিক কোনো সংগ্রামের অলংঘনীয় উপাদান বা বীরত্বব্যঞ্জক কর্মসূচি হয়ে থাকে তাহলে আলাদা বিষয়। এখানে মোটাদাগে যে যুদ্ধের প্রতি ঘৃণার দৃষ্টিক্ষেপ, তা হলো বলয় বিস্তারের বর্বর আস্ফালন, দুর্বলের ওপর সবলের পেষণী, কোনো শোষণ নিবর্তন ও মতবাদ জোর করে চাপিয়ে দেয়ার জবরদোস্তি। গ্রন্থভুক্ত মোট দশটি প্রবন্ধের মধ্যে নয়টিই কোনো না কোনো সংকলন, পুস্তিকা, সাপ্তাহিকী, ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত অথবা কোনো সেমিনারে পঠিত। কেবল ‘বিদ্রোহী কবিতার শতবর্ষ’ প্রবন্ধটি ব্যতিক্রম। রচনাটি এই বইয়েই প্রথম ছাপার অক্ষরে অঙ্গীভূত হলো। ছয় কিসিমের দশটি গদ্য। এই ছয় ভাগের কোনো না কোনো ভাগ পাঠককে কমবেশি কামড়ে ধরবে, এমনটিই ভাবতে ইচ্ছে হয়। নিজের রচনার প্রতি অন্ধত্ব বলে কথা- মানে সেটাকে নিজের নিকৃষ্ট লেখা বিষয়ে উচ্ছ্বাসের আদিখ্যেতাও বলা যেতে পারে। আদোতে এর একটি লেখাও একজন পাঠকের কাছেও ভালো নাও লাগতে পারে। তবুও- কেন যেনো মনে হয়, পাঠক কি আর আমার ওপর অতোটা নিষ্ঠুর হবেন? তবে প্রস্তুত আছি বাহবা অথবা ভৎর্সনার জন্য। দেখা যাক। কাকতালীয়ভাবে দশটি প্রবন্ধ মাপা ঠিক দশটি বছরের সুদীর্ঘ কালপর্বে প্রসূত। নির্দিষ্ট সময়কাঠামোয় সেগুলোকে মুসাফিদা করার কোনো নিয়তবদ্ধতা যে ছিল না, তা সহজেই অনুমেয়। বলতে একটুও কুণ্ঠা নেই সে, অন্তত এর সাতটি লেখাই অনুরুদ্ধ রচনা। কিন্তু তা কোনো অবস্থাতেই ‘উপরোধে ঢেঁকি গেলা’র নামান্তর নয়। মানে বোঝাতে চাচ্ছি- ফরমায়েসি লেখা আর অনুরোধের সুরে চেয়ে নেয়া লেখা, মনেহয় একই কথা নয়।