একটা অদ্ভুত সুন্দর মেয়ে একাকী ভীষণ বিষন্ন ভঙ্গিতে পাহাড়ের ধাপ বেয়ে উপরে উঠছে। গােলাপী শাড়িতে তাকে মনে হচ্ছে সবুজ পাহাড়ের মধ্যে সদ্যফোটা গােলাপ। মেয়েটি যত উপরে ওঠে তত তার বিষন্নতা বেড়ে যায়। সেটা কি মাধ্যাকর্ষণ শক্তির জন্য নাকি মেয়েটা যে গন্তব্যে পৌঁছতে চায় সেই গন্তব্যের সম্ভাব্য পরিণতি মেয়েটাকে বিষন্ন করে রাখছে। শ্রাবণ চোখ রগড়ায়, না ভুল দেখছে না সে, মেয়েটা একবারও পিছনে তাকাচ্ছে না, এমন বৃষ্টিভেজা মেদুর বিকেল বেলায় মেয়েটা একা একা কার কাছে যাচ্ছে? পাহাড়ের দুর্গম পথ কেন পাড়ি দিচ্ছে? এসব ভাবনার মধ্যেই শ্রাবণ দেখে গােলাপটা যেন একটু কেঁপে উঠল, তারপর বেঁকে চুড়ে নীচের দিকে গড়াতে শুরু করল । ঘটনার আকস্মিকতায় শ্রাবণ কি করা উচিত ভুলে যায় এক মুহূর্ত। তারপরক্ষণেই সম্বিত ফিরিয়ে ভেজা পাথরের উপর দিয়ে দৌড় শুরু করে। এক দৌড়ে পাহাড়ী পথটার মাঝামাঝি পৌঁছায় মেয়েটাও তখন ধীর গতিতে গড়াতে গড়াতে নামছে। তবে আরেকটু নীচে নামলেই পাহাড় অনেক বেশি খাড়া। আসলে পাহাড় ক্রমাগত কাটার ফলে এভাবে খাড়া হয়ে গেছে। ওখান থেকে সে আর এভাবে ধীর গতিতে পড়বে না। একদম ঝপ করে সােজা নিচের মাটিতে সেখান থেকে খাদে যেতেও বা কতক্ষণ! মেয়েটাকে এখনই বাঁধা দিতে পারলে নীচে পড়ে গেলে খুব বেশি আহত হবে! শ্রাবণ ঝাঁপ দেয়, সিঁড়ির ধাপে হাঁটু গেড়ে বসে মেয়েটাকে পাহাড়ের কোল থেকে লুফে নেয় দুহাতে। মেয়েটা বিস্ফারিত দুই চোখে শ্রাবণকে কি যেন বলার চেষ্টা করতে করতে জ্ঞান হারায়।
তিনি তরুণ কবি হিসেবেই সমধিক পরিচিত। সমান দক্ষতা রয়েছে কথাসাহিত্য ও অনুবাদে। প্রথম কাব্যগ্রন্থ সহাস্য বিষন্নতা প্রকাশিত হয় ২০০৭ সালে। প্রথম উপন্যাস আরমান শেখ ও তার শেকড় সংক্রান্ত জটিলতা (২০০৮)-এর জন্য পেয়েছেন খুলনা রাইটার্স্ পদক ২০০৯। তৃণমূল মানুষকে খুব কাছে থেকে দেখেছেন। প্রান্তিক সাংবাদিকতার সুবাদে পেয়েছেন প্রাকৃতজন পুরস্কার ২০০১। তাঁর উপন্যাসের প্রতি পরতে মানুষের জীবনবোধ, দ্বন্ধ, দর্শ্ন, জীবনকে নৈর্ব্যক্তিকভাবে দেখার প্রবণতা লক্ষনীয়। এই সঙ্গে প্রবল আবেগময় ভাষার সহজ সরল বুননে পাঠককে ধরে রাখেন উপন্যাস শেষ না হওয়া পর্য্ন্ত। একাধিক বই পুনঃমুদ্রিত হয়েছে। এ লেখকের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২৬টি।