স্মৃতিকাতরতা, স্বপ্নময়তা কবিকে ব্যাকুল করে তুলে, সৃষ্টির আকুলতায় ডুবিয়ে রাখে। সেই আকুলতায় ডুবে ডুবে কবি পান করেন কবিতার অমৃত, তুলে আনেন কবিতার মনিমুক্তো। জয়নুল আবেদীন মুকুলের আলোচ্য কাব্যগ্রন্থের অধিকাংশ কবিতায় এক ধরণের স্মৃতিকাতরতাজাত বিষাদ, কষ্ট, দুঃখবোধ কবিকে তাড়িয়ে বেড়ায়। কবিদের স্বাতন্ত্র এখানে, তাঁরা এই দুঃখবোধ, কষ্টকে উপভোগ করেন। জয়নুল আবেদীন মুকুলের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। কবি যেন বিষাদ, কষ্ট, দুঃখবোধের সুস্বাদু শরবত বানিয়ে পান করেছেন। শহরে বেড়ে ওঠা মুকুল প্রায়শ গ্রামে ছুটে যান। ফুল, বৃক্ষ, পাখি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী, সমুদ্দুর-এর প্রতি তার যারপরনাই ভালোবাসা। রোমান্টিক সংবেদনশীলতার পাশাপাশি মানবিক সহমর্মিতা তার কবিতায় যোগ করেছে নতুন মাত্রা। সমাজের উপেক্ষিত জনগোষ্ঠী, আপনজনের বিয়োগ ব্যথা, রাজনীতির নামে মানুষ পুঁড়ে মারা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, ফিলিস্তিনে ইজরায়েলের বর্বরোচিত হামলা, অনুষ্ঠান সর্বস্ব পহেলা বৈশাখ, থার্টি ফাস্ট নাইটের বাড়াবাড়ি ইত্যাকার নানান প্রসঙ্গ এসেছে মুকুলের কবিতায়। কবি তার পরলোকগত পিতাকে সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করেছেন, শ্রদ্ধা জানিয়েছেন একুশের শহিদদের। কারো কারো কবিতা দুর্বোধ্য, মুকুলের কবিতার জল প্রথম ছোঁয়াতেই পাঠককে প্রলুব্ধ করে কবিতার সরোবরে আকণ্ঠ অবগাহন করতে। মুকুল আসলেই দরিয়ানগরের একজন প্রথম সারির কবিতাচাষী। কবিতার জমিতে কবি উত্তরোত্তর কবিতার বীজ বুনে যাবেন এই কামনা করি। জাতিসত্তার কবি মুহুম্মদ নূরুল হুদা
পৃথিবীর দীর্ঘতম বালিয়াড়ি সৈকত সমৃদ্ধ পর্যটন নগরী কক্সবাজার জেলার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯৫৯ সালের পঁচিশে ডিসেম্বর কবি জয়নুল আবেদীন মুকুলের জন্মা জেলার প্রথিতযশা আইনজীবী পিতা মরহুম মোমতাজুল হক এবং রত্নগর্ভা মাতা মরহুম রিজিয়া বেগমের পঞ্চম সন্তান। মুখর সমুদ্র ও মৌন পাহাড়ের সঙ্গমে শিশুকাল থেকেই কবির চেতন ও অবচেতন মনে তৈরি হয় অনন্য কল্পনা শক্তি এবং ভাবাবেগের বীজতলা। ক্রমে ক্রমে স্বীয় মনোজগতে নির্মাণ করেন এক কাব্যিক চারণভূমি। কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) ও ১৯৮৩ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ব্যাংকার হিসাবে পেশাগত জীবনে পদার্পণ। বর্তমানে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্বরত। ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষার্থী জেবুন্নেছা চৌধুরীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁরা দুই কন্যা সন্তান তাসপিয়া তাসনিম ও নাফিসা নাওয়াল-এর জনক-জননী।