মসনবী’র কাব্যিক ছন্দ-রসে রুমি আমাদের জানিয়ে দেন, আমরা প্রেমের সন্তান আর প্রেম আমাদের জননী। প্রেম সম্পূর্ণ। আমরা তার খণ্ডিত অংশ। তুমি আর এই পৃথিবীর সবকিছুর মধ্যে সেতুবন্ধনই হলো তোমার প্রেম। প্রত্যেক ধর্মেই প্রেম আছে কিন্তু প্রেমের কোনো ধর্ম নেই! তাই সময়ের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে- প্রবেশ করো প্রেমবৃত্তে। যাই ঘটুক মুখে হাসি ধরে রাখো। প্রেমে বিলীন করো নিজেকে। তাহলেই তুমি পৌঁছে যাবে সেই অনন্য পৃথিবীতে। যেখানে ‘স্থান’ বলে কিছু নেই। ‘সময়’ বলেও কিছু নেই। সেই প্রেমে উত্তুঙ্গ মাতাল হও। যে প্রেম সবকিছুকে টিকিয়ে রেখেছে। আমিত্ব থেকে মুক্ত হও। তোমার সহস্র শৃংখল বাঁধন অন্তর্হিত হয়ে যাবে। নিজের ভেতরে তাকাও। কেননা বিশাল এই মহাবিশ্ব তোমার বাইরের কিছু নয়। তোমার হৃদয় একটা প্রদীপ। সে প্রজ্বলিত হয়ে ওঠার জন্য প্রস্তুত; উন্মুখ হয়ে আছে। জেনে রাখো, তোমার আলোতেই আলোকিত হয় ওঠে এই বিশ্ব চরাচর। তোমার দুঃখকে ভয় কোরো না। ভেঙ্গে পড়ো না। যেখানে দুঃখ আছে সেখানেই দুঃখ থেকে মুক্তির উপায় আছে। যা হারিয়েছো তার জন্য দুঃখ করো না। তুমি তা আবার ফিরে পাবে, আরেকভাবে, অন্য রূপে। গলে যাওয়া বরফ হও। তোমার ভেতরের তুমিকে ধুয়ে মুছে ফেলো। হয়ে ওঠো বৃক্ষের মতো। ঝরা পাতা সব ঝরে যেতে দাও। অহমের দীর্ঘ রাত পুড়িয়ে ফেলে। দিনে মতো আলোকিত হও। আমরা তো সবাই আধ্যাত্ব জগতেরই অংশ। সর্বদা আকাঙ্খাও করি সেই জগতে ফিরে যাবার। তাই তোমার আত্মাকে সমুন্নত রাখো। বুকের মাঝখানের জানালা খুলে দাও। আত্মা উড়ে বেড়াক সর্বত্র। যদি খোদার দয়া পেতে চাও- দুর্বলের প্রতি দয়ার হাত বাড়িয়ে দাও। খোদার খোঁজ করো- পাবে নিজেকে। নিজের খোঁজ করো- পাবে খোদাকে। খোদার প্রতি আনত ও কৃতজ্ঞ হও। কৃতজ্ঞতা হলো আত্মার মদ। সেই মদে মাতাল হও। আর, প্রার্থনা করো- করে চলো। এক ও অদ্বিতীয় সৃষ্টিকর্তার সাহায্য ও করুণার জন্যই আমাদের প্রতিনিয়ত প্রার্থনা করতে হয়।