বাবার চোখে তাঁর কালো, খাটো মেয়েটিই সবচেয়ে মায়াবী, সুন্দরী। প্রভাকে নিয়ে বাবা কোনো টেনশন না করলেও মা টেনশন করেন। প্রভার বিয়ে নিয়ে মা সব সময় দুশ্চিন্তা করেন। কারণ, প্রভা দেখতে কালো, খাটো কিছুটা মোটা। বিয়ের কনে পছন্দের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ মানুষ যোগ্যতা, গুণের চেয়ে রূপটাই মুখ্য মনে করে। অনেকে বাহ্যিক সৌন্দর্যটাকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়। প্রভার সামনে মা তেমন কিছু না বললেও মায়ের দুশ্চিন্তার একমাত্র কারণ, যে প্রভার বিয়ে তা সে ঠিকই বুঝে। গায়ের রং, উচ্চতায় অন্য বোনদের থেকে প্রভা অনেকখানি আলাদা। চারবোনের মধ্যে প্রভা বাদে সবাই লম্বা, গায়ের রং ফর্সা। প্রভা দেখতে ঠিক তার দাদির মতো হয়েছে। প্রভার জন্মের দুইমাস পর তার দাদি মারা যান। প্রভাকে কোলে নিয়ে বাবা মোশারফ হোসেন প্রায়ই বলতেন, ‘আমার এক মা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। ঘর আলো করতে মহান রাব্বুল আলামিন প্রথম কন্যা প্রভাকে মায়ের কায়া দিয়ে মা’রূপে আমার কাছে পাঠিয়েছেন, শুকরিয়া।’ মোশারফ হোসেন চার মেয়েকে খুব আদর করেন। ছেলে নেই এতে উনার কোনো ধরনের আফসোস নেই, আক্ষেপ নেই। মেয়েদের আদর করে আম্মাজান, মা জননী, বলে ডাকেন। সরকারি চাকুরিজীবী মোশারফ হোসেনের স্ত্রী, চার মেয়ে প্রভা, সুভা, তমা, নোভাকে নিয়ে সুখের সংসার। ওনার ইচ্ছে চার মেয়ে আগে নিজেকে যোগ্য করে তুলবে, তারপর বিয়ের চিন্তাভাবনা করবেন। কিন্তু প্রভার মায়ের ইচ্ছে স্বামী চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার আগেই চার মেয়েকেই বিয়ে দিবেন। প্রভা তার গায়ের রং, উচ্চতা নিয়ে মোটেও চিন্তিত না। কে তাকে পছন্দ করলো আর কে কে পছন্দ করলো না এসবে কিছু মনে করে না। তার কাছে সেই অনন্য। সে কখনোই নিজেকে তুচ্ছ মনে করে না। নিজের উপর আত্মবিশ্বাস প্রবল। সে তার লেখাপড়া, নিজস্ব জগত নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটায়। সময় পেলেই বোনেরা যখন ত্বক, চুলের যত্ন করে। মুখে ফেইস প্যাক লাগায় মা প্রভাকে বলেন, ‘তুইও তো মুখে তমা নোভার মতো একটু আধটু ওসব মাখতে পারিস! নিজের দিকে নজরই দিস না। সব বুঝায়ে বলে দিতে হবে। সারাদিন এক রংয়ের উপর ডুবে থাকিস। কি যে মজা পাস এই আঁকাআঁকি করে।’ প্রভা তার কাজে মনোযোগ রেখেই মায়ের কথার জবাব দেয়, ‘মা, ওসব মাখলে যদি চামড়ার রংটা বেহেস্তের হুরদের মতো হয়ে যেতো তাহলে মেখে কবেই ধবধবে ফর্সা হয়ে যেতাম...হিহিহি। ততদিনে তোমার মাথা থেকে চিন্তার ঝাপিটাও নেমে যেতো। আমি সব বুঝি মা! তোমার চিন্তার কারণটা খুব ভালো করে জানি। আমি আগেও আমার সিদ্ধান্ত জানিয়েছি এখনও পরিষ্কারভাবে বলছি আমার বিয়ের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। আমার বিয়ের জন্য মোটা অঙ্কের যৌতুক গুনতে হোক এটা আমি কখনো চাই না।