আফজাল মুহাম্মদ আমার ছেলে প্রবীরের বন্ধু ও ক্লাসমেট। ছেলের মতোই তাকে আদর করি। ওর সাথে রয়েছে আমার আরেকটি সুন্দর সম্পর্ক। প্রকৃতির লীলাভ‚মি কালিয়াগোটা হাওড়ের দক্ষিণ পাড়ে আমার বাবার বাড়ি আর উত্তর পাড়ে ওর বাবার বাড়ি। আমরা বাল্যকালে যে হাওড়ের সুগন্ধি চালের ভাত খেয়েছি আফজালও ছোটবেলা একই হাওড়ের চালের ভাত খেয়ে বড় হয়েছে। যাক, এবার আসি আসল কথায়। আফজাল কবিতার বই প্রকাশ করতে যাচ্ছে শুনে আমি যারপরনাই আনন্দিত; সন্তানের সাফল্যে প্রত্যেক মা-ই আনন্দিত হয়। আমিও এর ব্যতিক্রম নই। প্রথমত, বইয়ের নামটাই আমাকে আন্দোলিত করেছে, জলসুন্দরী। আমরা জলের মানুষ। জলকে কেন্দ্র করেই আমাদের প্রাত্যাহিক জীবন আবর্তিত। জল সংস্কৃতিতে আমাদের বসবাস। বইয়ের নাম নির্বাচনে আফজাল অসাধারণ প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছে। নিজের জন্মস্থানকে সে সুন্দর মনন দিয়ে উপস্থাপন করেছে। এতে আমি গর্ববোধ করছি। জলসুন্দরী’র কবিতাগুলো পাঠ করলাম। তার লেখার মধ্যে ভাটি অঞ্চলের এক বিশাল বিবরণ লক্ষ্য করলাম। সে হাওড়ের মানুষের মান-অভিমান, আনন্দ-বেদনা, রাগ-বিরাগ, প্রত্যাশা ও সোনালি স্বপ্নকে কবিতার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছে। চাকুরি ও জীবন নিয়ে সদাব্যস্ত এই প্রচারবিমুখ ছেলেটি এতো সুন্দর কবিতা লিখতে পারে তা কখনও চিন্তা করি নাই। সে গোপনে গোপনে প্রেম ও প্রকৃতির মধুর চরণামৃত পান করেছে। প্রায় প্রতিটি কবিতাই আমার অন্তরে প্রশান্তি এনে দিয়েছে; জীবনের শেষপ্রান্তে নগরে বসেও আমি দেখতে পাচ্ছি হাওড়ের মধুময় বৈশাখ, হেমন্তের শিশিরভেজা প্রান্তর, অবারিত শ্রাবণধারা আর ঢেউ তোলা কালোজলের কালিয়াগোটা হাওড়। করচ, হিজল, বরুণ, জারুল, হোগলা, জিনারি, বনতুলসীসহ অসংখ্য বৃক্ষ ও বনজ ফুলের বর্ণনা দিয়ে সে হাওড়ের প্রকৃতিকে নিজের করে নিয়েছে। তার কবিতায় ভাটি জনপদের যেমন সুখ-দুঃখের বর্ণনা আছে তেমনি জলমতি কন্যার আবেগমথিত মোহময় কাহিনিও রয়েছে। হাওড় পাড়ের মানুষের দরিদ্র জীবন এড়িয়ে যেতে পারে নাই তার চোখকে। পল্লির হাজারো স্মৃতিঘেরা জীবন তাকে করেছে আবেশিত। সত্যি কথা বলতে আফজাল আবেগিক ও মধুময় এক সুন্দর সাহিত্য রচনা করেছে। গভীর রোমান্টিক মন নিয়ে সে সাজিয়েছে হাওড়বেষ্টিত লোকারণ্য। হাওড়ের বাস্তব জীবনকে প্রকাশ করেছে সে ছন্দের জাদুতে। জলসুন্দরী তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ। আশা করছি, ভবিষ্যতে সে আরও সুন্দর কবিতা উপহার দিবে। তার সমৃদ্ধি কামনা করছি। আফজালসহ আমার সকল সন্তানের মঙ্গল কামনা করছি।