ঢাকার বুকে গণহত্যার দৃশ্য দুরন্ত কিশোর শাহজামানকে পরিণত করেছিল প্রতিজ্ঞাবদ্ধ মুক্তিযোদ্ধায়। মরণপণ যুদ্ধের পুরো সময়টিতে জানতেও পারেননি তার মা ও বড় ভাইকে পাকিস্তানি হানাদাররা হত্যা করে ফেলে রেখেছিল বাড়ির পাশে একটি গর্তে। প্রায় নিরাবেগ বিবরণীতে শাহজামান মজুমদার তাঁর কৈশোরের সেই আগুনঝড়া দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করেছেন। কোনো বাড়তি কথা নেই এখানে, নেই কোনো অতিশয়োক্তি। কিন্তু মহাকাব্যিক একটি যুদ্ধে যত রকমের ঘটনা ঘটতে পারে, যত রকমের মানবিক অনুভূতির পরিচয় পাওয়া সম্ভব, তার সবই মিলবে এই স্মৃতিকথায়। বেপরোয়া বীরত্ব, দুঃসাহসী সফল অভিযান অথবা যুদ্ধের বিপর্যয়কর মুহূর্তে সঙ্গীদের রক্ষার জন্য নিশ্চিত মৃত্যুর ঝুঁকি গ্রহণের মতো অবিস্মরণীয় কাহিনি এখানে যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে সন্দেহ আর বিশ্বাসঘাতকতার, ভীরুতার বহু চিত্র। তেলিয়াপাড়াসহ আরও কয়েকটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের প্রত্যক্ষ বিবরণ এই গ্রন্থটিকে দিয়েছে বাড়তি তাৎপর্য। পাঠকের সাথে এই বইতে সাক্ষাৎ ঘটবে আমাদের ইতিহাসের অনেকগুলো পরিচিত মুখের, একই সাথে পাঠক জানবেন দুলামিয়ার মত ইতিহাসে নাম-না-লেখা-থাকা বীরদের বীরত্বগাঁথাও। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক স্মৃতিচারণমূলক সাহিত্যের ইতিহাসে এক কিশোরের মুক্তিযুদ্ধ একটি অবিস্মরণীয় কীর্তি হিসেবেই বিবেচিত হবে।