সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ অত্যন্ত জটিল আর ভারি ভয়ংকর। যুদ্ধের কারণ, পক্ষ-বিপক্ষ, শত্রু-মিত্রের স্বার্থ অনুধাবন—এতো দূরের বাঙাল-মুলুকে বসে সম্ভব না। এরপরও আমি যখন লিখতে বসেছি, আমার কাছে মনে হয়েছে—আমার ওপর দিয়ে বিকট শব্দে উড়ে যাচ্ছে মার্কিন আর রুশ বিমান। যাবার সময় কালো কী একটা ফেলে দিয়ে যাচ্ছে। আমার সামনে অস্ত্র হাতে মিসাইল কাঁধে কামান দাগিয়ে সাঁজোয়া চালিয়ে ছুটে আসছে হিংস্র বাশার আল-আসাদ। আমার পেছন থেকে বিপুল নারী-পুরুষ হেঁটে হেঁটে আসছে। অনেকের হাতে ফেস্টুন। ফেস্টুনে লেখা—যুবক-হত্যার বিচার চাই! আমার ডান থেকে এগিয়ে আসছে কালো আইএস আর বাম থেকে কুর্দি-বাহিনী। ওরা বেশ চিন্তিত। হামলা তো করতেই হবে, কিন্তু কাদের ওপর প্রথম করবে—সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। ওই দিকে দূরে বসে ক্ষেপণাস্ত্র পরিষ্কার করছে ইসরাঈল। ওদের মুখ হাসি হাসি। অনেক দিন বাদে জিনিশটা ব্যবহার করতে পারছে। তাও আবার চির-শত্রুর ওপর। মাঝে সাঝে নারীদের আর্তনাদে শিশুদের কান্নায় পুরুষদের চিৎকারে আমার কলম থেমে যেতো। তাকিয়ে দেখতাম—আশপাশে কেউ নেই। আর লিখতে পারতাম না। ভাবতাম—আমাদের মুক্তিযুদ্ধও বুঝি এরকম ভয়াবহ ছিলো। বাংলার মুক্তিযুদ্ধ আর সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ একই। জালেম মুসলিম-শাসকের বিরুদ্ধে মজলুম মুসলিম-জনতার লড়াই। ইতিহাস তো বলছে—জয় হবে মজলুম জনতার। বিজয় হয়েছে যেমন সালাম-রফিকদের, বিজয় হবে তেমন হানিন-ফারসিদদের। আমরা তো ন-মাসেই হয়েছি স্বাধীন। ওরা স্বাধীন হবে কবে?
আটের চৌদ্দ ছিয়ানব্বুইতে পুরোনো ঢাকার অভিজাত এক মুসলিম পরিবারে জন্ম। পড়াশোনা করেছেন দেশের নামজাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-মালিবাগ জামিয়া। আরবি সাহিত্যের প্রতি প্রবল ঝোঁক থেকে লেখালেখিতে আসা। প্রাচ্য-প্রতীচ্যের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে পড়তে, জানতে এবং লিখতে তুমুল আগ্রহবোধ করেন। আড়ালে থেকে কাজ করে যেতে পছন্দ করেন। অবসরে বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজতে ভালোবাসেন। বাবা, মা, এক ভাই ও দুই বোনকে নিয়ে আনন্দে টইটম্বুর এক পরিবারের সদস্য। সদা হাসিখুশি, মোটামুটি লম্বা, চশমা-পরা সহজসরল মানুষটিই আবদুর রহমান ফারুকী।