নর-নারীর যাপিত জীবন নিয়েই সৃষ্টি হয়েছে এই বিশ্ব-সংসার। আমরা জানি, নারীর গৌরব তার মাতৃত্বে। কিন্তু নারী তো শুধু গর্ভধারিণী মাতাই নয়, সে একজন মানুষও বটে; এ দুই সত্তার মাঝে যখন সংঘাত ঘটে, তখনই হয় বিপত্তি। আমার ‘জনপদে শ্বাপদ’ গল্পে, সেটাই আমরা দেখতে পেয়েছি। আবার কোনো দোষে দোষী না হয়েও, আলতাবানু সমাজের চোখে, স্বামীর চোখে, মর্যাদা হারিয়ে, সহানুভূতি হারিয়ে, আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছিল। কিন্তু একই সামাজিক রীতি-নীতি সংস্কারের আবেষ্টনীর মাঝে বাস করেও, ঘটনার প্রত্যক্ষ্যদর্শী রাবেয়া এই অন্যায়-অবিচার মেনে নিতে পারেনি-প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে, তথাকথিত নারী নির্যাতনের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল। নারী-জীবনের প্রচলিত রীতি-নীতি সংস্কারের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে বিদ্রোহের সুর ধ্বনিত করেছিল। আবার জীবনের চলার পথে, হৃদয়ের পটে, কত রঙেরই যে ছোঁয়া লাগে। রংধনুর রঙের মতো সেই রং হয়তো বা ক্ষণস্থায়ী হয়, কিন্তু তার অনুভূতি বিলীন হয়ে যায় না। গোপনে রয়ে যায়। তাই প্রশ্ন জাগে, স্বাতীর মনের আকাশ থেকে, নওশাদের সাথে স্বল্প পরিচয়ের আনন্দময় স্মৃতি কি একেবারেই মুছে যাবে? আমরা দেখি, জাগতিক, সাংসারিক, মানসিক চাওয়া-পাওয়ার মাঝেই সাধারণ মানুষের জীবন আবর্তিত হয়। কিন্তু এই চাওয়া-পাওয়ার ব্যবধানটা যদি বেশি হয়ে যায়, তখন অতীত স্মৃতির মাঝে মন খুঁজে নেয় শামিত্ম আর তৃপ্তি। ‘একই বৃত্তে’ গল্পে আকলিমা বেগমের জীবনের বাসত্মবতাকে তুলে ধরা হয়েছে। এমনি করে ‘আলতাবানু’ গল্পগ্রন্থের প্রতিটি আখ্যানকে বাসত্মবধর্মী করে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।