সিরাজগঞ্জ জেলার এক প্রত্যমত্ম গ্রামীণ জনপদ জামকুশা। যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে তেমন কিছুই নেই। নেই বিদ্যুৎ। অধিকাংশ মানুষের আর্থিক অবস্থাও দারিদ্র্যসীমা সংলগ্ন। বাল্যবিবাহের অভিশাপ নারীশিক্ষার অন্যতম প্রধান অমত্মরায়। চিকিৎসা ব্যবস্থাও শোচনীয়। পশ্চাৎপদ সেই অবহেলিত অজপাড়াগাঁ জামকুশার ভাগ্যাকাশে দেবদূতের মতো আবির্ভাব ঘটে এক অসাধারণ কিশোরের, যার নাম আজিবর। লোকে বলে অঙ্কের জাদুকর, আজিবর। অঙ্কে বিশেষ পারদর্শিতা তাকে আশপাশের দশ গ্রামে, এমনকি সিরাজগঞ্জ শহরেও ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়। হতদরিদ্র পরিবারের সমত্মান আজিবরকে কেন্দ্র করে বদলে যেতে শুরম্ন করে জামকুশা ও এর আশপাশের গ্রামসমূহ। অঙ্কের জাদুকর আজিবরের সুনাম ক্রমান্বয়ে চারপাশে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। তাকে দেখতে, তার অঙ্কের জাদু দেখতে, তার মুখের কথা শুনতে দলে দলে মানুষ ভিড় জমাতে শুরম্ন করে জামকুশা উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন খেলার মাঠে। সেখানেই হতো সর্বসাধারণের জন্য অঙ্কের জাদুর প্রদর্শনী। মানুষ আজিবরের অঙ্কের জাদু দেখতে আসত। ভীষণভাবে মুগ্ধ হতো, আজিবরের মুখের কথাও শুনত মন্ত্রমুগ্ধের মতো। জামকুশা উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন অগ্রসরমাণ মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন সমাজহিতৈষী শিক্ষক আজিবরকে কেন্দ্র করে শুরম্ন করেন সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলন। আর্থিক ও সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষকে দ্রম্নত উন্নতির জন্য জুতসই পরামর্শ প্রদান, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে প্রচারণা চালিয়ে নারীশিক্ষাকে এগিয়ে নেওয়া, স্বেচ্ছাশ্রমে গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা প্রদান ইত্যাদি নানাবিধ কার্যক্রমকে অত্যমত্ম সুসংগঠিতভাবে এগিয়ে নিতে থাকেন তারা। সিরাজগঞ্জ জেলার সম্মানিত জেলা প্রশাসক জানতে পারেন আজিবরের অঙ্কের জাদুর কথা, জামকুশা গ্রামের বদলে যাওয়ার কথা। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা দেশপ্রেমিক সুশীল সেবক জেলা প্রশাসক মহোদয় আজিবরের অসাধারণ ও অভূতপূর্ব অঙ্কের জাদু এবং সমাজ পরিবর্তনের নিরমত্মর প্রয়াস শহরের শিক্ষার্থীদের মাঝেও তুলে ধরতে উদ্যোগ নেন। আজিবরের প্রতি জেলা প্রশাসনের বিশেষ আগ্রহের প্রতিফলন ঘটে জামকুশা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় দ্রম্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং বিদ্যুতায়নের মধ্য দিয়ে। অবশ্য এসবের কৃতিত্ব নিজেদের সপক্ষে নিতে কৌশলে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে থাকেন নরকৈল ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান, যিনি আগামীতেও চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হতে চান তিনি। আজিবরের বাবা অক্লামত্ম পরিশ্রম করে সংসার চালাতেন। তিনি স্বপ্ন দেখতেন তার তিনটি সমত্মান আজিবর, হাবিবর ও নাজমা পড়ালেখা শিখে একদিন অনেক বড় হবে। চিকিৎসা করাতে অর্থ ব্যয়ের চাপ সামলাতে পারবেন না চিমত্মা করে দীর্ঘদিন তিনি শরীরে অসুখ পুষে রেখেছেন। তবে একপর্যায়ে আর কিছুতেই লুকিয়ে রাখতে পারেন না যক্ষার মতো অসুখ। আজিবররা ওদের সবটুকু সাধ্য দিয়ে চিকিৎসা করিয়েও বাঁচিয়ে রাখতে পারে না তাকে। বাবার মৃত্যুর পর সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে আজিবরের কাঁধে। অঙ্কের জাদুকর আজিবর সংসারের অঙ্ক মেলাতে হিমশিম খেতে থাকে।