এই বইটির মূল থিসিস হল ঐতিহাসিক নিদ্ধতিতে বিশ্বাস নিছক কুসংস্কার বই কিছু নয় এবং বৈজ্ঞানিক বা অন্য কোনও যৌক্তিক পদ্ধতির মাধ্যমেই মানব-ইতিহাস সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করার সুযোগ নেই। মানব ইতিহাসের গতিধারা মানবীয় জ্ঞানের বিকাশ দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়। বৌক্তিক বা বৈজ্ঞানিক, কোনও পদ্ধতির মাধ্যমেই আমরা বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের ভবিষ্যৎ বিকাশ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারি না। কার্ল পপার লিখেছেন, 'ঐতিহাসিক নিয়তিবাদ (historicism) বলতে আমি সমাজ বিজ্ঞানের একটি আভিমুখ্য বুঝাতে চাই, যার লক্ষ্য হচ্ছে ঐতিহাসিক ভবিষ্যদ্বাণী প্রদান: এবং তা পূর্ব-ধারণা পোষণ করে যে, ঐতিহাসিক বিবর্তনের পেছনে যে ছন্দ বা প্যাটার্ন বা সূত্র বা প্রবণতা রয়েছে, তা আবিষ্কারের মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব।' পপার যুক্তি দেখিয়েছেন যে, ইতিহাসের এমন কোনও ছন্দ, প্যাটার্ন বা সূত্র নেই। পপারের দর্শন আমাদেরকে অন্য এমন অনেক দর্শনের মুখোমুখি করে, যা ভুল করে হলেও বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, আবার প্রস্তুত জীবন সম্পদ ও সম্ভাবনাকে করে মিলিয়ে গেছে, মিলিয়েও যাচ্ছে। ইতিহাস সম্পর্কে যে কোনও ভাবিষ্যদ্বাণী করা যায় না তা অনেক দার্শনিকই বলেছেন, কিন্তু পপারের পূর্বে কেউই এতটা জোরালোভাবে, এতটা যৌক্তিকভাবে তা তুলে ধরেননি। তাই তা থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়ার অনেক কিছু আছে। বিশ শতকের প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন দার্শনিক মতবাদ যেমন, যৌক্তিক প্রত্যক্ষবাদ, মার্কসবাদ, নিয়তিবাদ, ভাষা-দর্শন, বিশ্লেষণী-দর্শনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এদের কয়েকটির ওপর মরণাখাত হেনে সুখ্যাতি অর্জন করেছেন বিগত শতাব্দীর বিজ্ঞান-দর্শনের সারথী মূল প্রবক্তা কার্ল পপার (১৯০২-১৯৯৪)। তাঁর লেখা পুস্তক The Logic of Scientific Discovery, The Open Society and Its Enemises, Conjectures and Refatations, Olive- tive Knowledge ইতোমধ্যেই ধ্রুপদি দর্শনিক পৃষ্ঠকের খ্যাতি ও মর্যাদা লাভ করেছে।