মেক্সিকোর স্বাধীনতা দুশ বছরের। এর আগে তিনশ বছর স্প্যানিশ উপনিবেশের প্রভাবে দেশটিতে স্প্যানিশ ভাষা এবং ক্যাথলিক ধর্ম জেঁকে বসেছে। তবু মেক্সিক বা অ্যাজটেক, মায়া, তোলটেকসহ নানা প্রাগৈতিহাসিক জাতি ও উপজাতি আজকের মেক্সিকান সংস্কৃতি নির্মাণে গভীর অবদান রেখেছে। মেক্সিকানরা তাই শিল্পকলা, সংগীত ও নৃত্যের ভক্ত। তারা রং, সুর, তাল ও টেকিলার প্রভাবে উন্মত্ত। মেক্সিকো সিটির ফুটপাথ থেকে সর্বত্র রং, রস ও উন্মাদনার ছড়াছড়ি। বাংলাদেশের তিন চিত্রশিল্পী মেক্সিকো সিটিতে এসেছিলেন যৌথ চিত্র প্রদর্শনী উপলক্ষে। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে। দেয়ালে দেয়ালে ম্যুরাল, ফুটপাথে বিচিত্র রকম খাবারের পসরা, সন্ধ্যার পর গিটারের ছন্দে, মারিয়াচি গানের সুরে আর টেকিলা বা মেসকালের গন্ধে নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ বা তরুণ সব বয়সের, সব শ্রেণি, সব পেশার মানুষের এক হয়ে যাওয়াÑমেক্সিকো সিটির এই চরিত্র বিদেশি বা পর্যটক যে কাউকে কাছে টেনে নিতে যথেষ্ট। মেক্সিকোতে থাকা দশটা দিনের প্রতিটা দিনই তাই মনে হয়েছে উৎসব। মনে হয়েছে এ যেন বাংলাদেশের হারিয়ে যাওয়া কোনো শহর। এমন শহরের বৃত্তান্ত জেনে আবার অবাক হতে হয়। অ্যাজটেক শাসনামলে সমৃদ্ধ এক নগরী টিনোচটিটলান-কে ধ্বংস করে সেই ধ্বংসাবশেষের উপর স্প্যানিশরা গড়ে তুলে নিজেদের শহর। মেক্সিক থেকে নাম হয় মেক্সিকো সিটি। পাঁচশ বছর পর মেক্সিকো সিটির যেখানেই খনন করা হচ্ছে, সেখানেই বের হয়ে আসছে মাটি-চাপা দেওয়া পুরোনো শহরের কংকাল। মেক্সিকো সিটি যেন তাই একের ভেতর দুই। শহরের উপর শহর।
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী মাহফুজুর রহমান ছিলেন একজন পেশাদার কূটনীতিক। তিনি পোল্যান্ড, ইউক্রেন ও মলডোভায় পাঁচ বছরেরও বেশি সময় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্থাপত্যে স্নাতক এবং অস্ট্রেলিয়ার মনাশ বিশ্ববিদ্যালয় হতে কূটনীতি ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়া হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়, হাওয়াইয়ের এশিয়া প্যাসিফিক সেন্টার ফর সিকিউরিটি স্টাডিজে আন্তর্জাতিক রাজনীতি, নিরাপত্তা ও শান্তি বিষয়ে একাধিক কর্মশালা ও অনুশীলন সমাপ্ত করেছেন। তিনি ময়মনসিংহ জিলা স্কুল ও মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজের ছাত্র। ১৯৬১তে জন্ম নেওয়া মাহফুজুর রহমান দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন পত্রিকায় এবং অনলাইন সাময়িকী ও গবেষণা সাইটে নিয়মিত লিখেন, যার মধ্যে দি নিউ এজ, বাংলাদেশ পোস্ট, প্রথম আলো অনলাইন ভার্শন, সংবাদ প্রতিদিন, জিওপলিটিকস ডট কম অন্যতম। তিনি আন্তর্জাতিক রাজনীতি, নিরাপত্তা ও কূটনীতি নিয়ে যেমন লিখেন, তেমন লিখছেন নন্দনতত্ত্ব ও চিত্রশিল্প নিয়ে নিবন্ধ কিংবা ভ্রমণকাহিনি, ছোটো গল্প ও কবিতা। কোনো কোনো লেখা এর মধ্যে সাপ্তাহিক ২০০০, হাল-ফ্যাশন, তর্কবাংলা, ঘুঙুর, দেশ-প্রসঙ্গ সাময়িকীতে প্রকাশিত। তাঁর ভ্রমণকাহিনিতে এমন বিচিত্র সব উপাদান নিয়ে আসেন যে লেখাটি বহুমাত্রায় উপভোগ্য হয়ে উঠে। তাঁর গদ্যশৈলী সহজ এবং সাবলীল। লেখার পাশাপাশি মাহফুজুর রহমান ছবি আঁকেন, আবৃতি করেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে বক্তৃতা করেন। তিনি নিতোমধ্যে ওয়ারশ, এথেন্স, মেক্সিকো সিটি এবং টোকিয়োতে চিত্রপ্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন। তাঁর অধিকাংশ বইয়ের পাতায় পাতায় তিনি নিজের আঁকা ছবিও জুড়ে দেন। তিনি গান, বিশেষ করে পুঁথি ও জারি গানও রচনা করেছেন। আশ্চর্য না যে তাঁর বহুমাত্রিক প্রতিভা তাঁকে মিজ এশিয়া-প্যাসিফিক আর্থ প্রতিযোগিতা বা গুড ফুড ফেস্টিভালে বিচারকের আসনে আসীন করেছে। ছাত্রাবস্থায় তিনি স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। বর্তমানে তিনি লেখালেখির পাশাপাশি সংসদীয় পদ্ধতি, শাসন ব্যবস্থা ও গণতন্ত্র নিয়ে গবেষণা কর্মের সঙ্গে জড়িত।