ভাষাশৈলীতে জগদীশচন্দ্র ছিলেন সমকালীন। যেমন নিজের আমলে সমকালীন ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র। এই সমকালীনতার ব্যাপারটা পরের যুগের মানুষদের মেনে নিতেই হয়। শেকসপিয়ারের নাটক চিরন্তন। সে কি সংলাপের ভাষা শৈলীতে? তা কখনো নয়। নাটকের কাঠামো, চরিত্রের সংলাপ ও উদ্ভাস তার নাট্যকর্মকে চিরকালীন করেছে। তার নাটকের সংলাপে এমন অনেক শব্দ রয়েছে যা এখন অপ্রচলিত শব্দ তালিকায় চলে গেছে । কথাটা বলতে হলো কেননা জগদীশচন্দ্র ও অবলা বসুর যে চৌত্রিশটি রচনা আমরা এই সংকলনে দিয়েছি সব কয়টিই সাধু-গদ্যে লেখা। শুধু গল্প কয়েকটির সংলাপে চলতি-গদ্য রয়েছে। জগদীশচন্দ্রের গবেষণা জীবনকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথম ভাগ পদার্থবিদ্যার। মাইক্রোওয়েভ আবিষ্কার করে তিনি জগৎখ্যাতি অর্জন করেছেন। দ্বিতীয় ভাগে তিনি সজীব আর জড় পদার্থের সামঞ্জস্য স্থাপনের চেষ্টা করেন। তখন বিজ্ঞান- মহলে তর্ক-বিতর্কের ঝড় বয়েছিল। শেষ ভাগে তার কাজের বিষয় জীব-পদার্থবিদ্যা। আর একটু বিশেষ করে বললে ‘উদ্ভিদ শারীরবিদ্যা’ও বলা যায়। এ বিষয়ে তিনি পৃথিবীর অন্যতম পথিকৃৎ । সংকলিত রচনাগুলোর দিকে যদি আমরা নিবিড়ভাবে তাকাই, আমরা দেখব, সিংহভাগ রচনাই তার গবেষণার ওপর ভিত্তি করে লেখা। এর বাইরে রয়েছে অনেকগুলো ভ্রমণকাহিনী। আর গোটাকয় অসাধারণ গল্প। কিশোরদের গল্প। ‘নিরুদ্দেশের কাহিনী' লিখে তিনি 'কুন্তলীন' পুরস্কার পেয়েছিলেন। এটিকে বাংলা সাহিত্যের প্রথম ‘কল্পবিজ্ঞানের গল্প' হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়। এই গল্পটি তিনি পরে যখন ‘অব্যক্ত' গ্রন্থে সংকলিত করেছিলেন তখন তার নাম বদল করেছেন। ইংরেজি সকল শব্দ বর্জন করেছেন। ‘কুন্তলীন’ কথাটা প্রতিযোগিতার জন্য আবশ্যক ছিল। পরে এই শব্দটিও বর্জন করেছেন । এর বাইরে এই সংকলনে গল্প বলতে গেলে ‘বন্দির মুক্তি’ আর ‘সুরেশদের বাগান', ‘ইতর প্রাণীদের দয়া' রচনাটিতে গল্পের ছোঁয়া থাকলেও ঠিক গল্প বলা চলে না। ফলে এই সংকলন গ্রন্থটিকে আমরা এককথায় গবেষণানির্ভর নিবন্ধ, ভ্রমণ আখ্যান আর ছোটগল্পের সংকলন গ্রন্থ বলতে পারি