প্রাচীনযুগের ভারত-ইতিহাসের উপাদানসমূহকে চারিটি ভাগে ভাগ করা যায় যথাড় (১) ধর্মীয় শাস্ত্র ও সাহিত্য, (২) কিংবদন্তী ও ঐতিহাসিক- সাহিত্য, (৩) প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এবং (৪) বৈদেশিক বৃত্তান্ত। (১) ধর্মীয় শাস্ত্র ও সাহিত্য (Religious and Secular Literature): আর্যদের আগমনের পর হইতে আলেকজান্ডারের আক্রমণকাল পর্যন্ত এই সময়ের ইতিহাসের প্রধান উপাদান হইল ধর্মাশ্রয়ী সাহিত্য। বৈদিক সাহিত্য, যথাড়তুর্বেদ, বেদাঙ্গ, সূত্রসাহিত্য ইত্যাদি হইতে আর্যদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনের পরিচয় এবং আর্য-অনার্য সংগ্রামের সুস্পষ্ট চিত্র পাওয়া যায়। এতদ্ভিন্ন এইগুলি হইতে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও আর্যদের জ্ঞানবিকাশের পরিচয়ও পাওয়া যায়। বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থসমূহ হইতে যেমন ত্রিপিটক, নিকায়, জাতক, দ্বীপবংশ ইত্যাদি হইতে তৎকালীন ভারতের সামাজিক অবস্থা ও মনীষীগণের ইত্তিবৃত্ত পাওয়া যায়। দ্বীপবংশ ও মহাবংশ হইতে সিংহলের ইতিহাস জানা যায়। 'ললিতাবিস্তার' ও 'বৈপুল্য-সূত্র' হইতে বুদ্ধের জীবনী ও বৌদ্ধধর্মের নীতিগুলি জানা যায়। 'জাতক' নামক গ্রন্থে বুদ্ধের পূর্বজীবনের বিবরণ পাওয়া যায়। বৌদ্ধদের মতে বহু জন্মের ভিতর দিয়া বুদ্ধ শাক্যবংশে জন্মগ্রহণ করিয়া জ্ঞানলাভ করিয়াছিলেন। প্রায় ৫৪৯টি জাতক-কাহিনী সংগৃহীত ও প্রকাশিত হইয়াছে। জাতক-কাহিনী গুলিতে সমকালীন রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মজীবনের পরিচয় পাওয়া যায়। এই কাহিনীগুলি সম্ভবতঃ, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় খ্রীষ্টাব্দে সংকলিত হইয়াছিল। উইন্টারনিজ (Winternitz)-এর মতে "শুধু সাহিত্য ও শিল্পের ক্ষেত্রেই নহে তৃতীয় খ্রীষ্টপূর্বাব্দের সভ্যতার ইতিহাসে জাতক-কাহিনীগুলি এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করিয়া আছে।বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থের ন্যায় জৈন ধর্মগ্রন্থগুলিও যেমন ভগবতী সূত্র, মেরুতুঙ্গ ইত্যাদি ইতিহাসের উপাদান হিসাবে বিশেষ উল্লেখযোগ্য।