জোছনা রাতে গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে গেছে শৈশব। কৈশোরও হারিয়ে গেছে গোল্লাছুটের দুরন্তপনায়। তারুণ্যের উচ্ছ্বাস নেই, নেই যৌবনের ঝাঁজালো মিছিল। আছে শুধু কবিতা নামক লাবণ্যময় স্বপ্নসারথি। এখন কবিতার মধ্যেই খুঁজে ফিরি নিজেকে। নিজের ভালো লাগা-মন্দ লাগা-ভালোবাসা, প্রেম-প্রীতি, আনন্দবোধ সব কিছু খুঁজে ফিরি কবিতালোকে। প্রকৃতির সৌন্দর্য, প্রেমের মাহাত্ম্য, সত্যের মুখচ্ছবি ফুটে ওঠে কবিতার আবরণে। এই কবিতার সঙ্গে আমার প্রেমপূর্ণ গৃহস্থালি দীর্ঘদিনের; কিন্তু কেন―তার কোনো উত্তর জানা নেই। ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণহীন এই ভালোবাসা বুকের মধ্যে তোলপাড় করে গোপনে গোপনে। আমি অস্থির হয়েও স্থিরভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করি মন-ভুবনের ছবি। এই ছবি আঁকা হয় শব্দ নামের রংতুলিতে। বর্ণে বর্ণে বর্ণিল হয়ে ওঠে দৃশ্যের পর দৃশ্যের ভাষাচিত্র। অদৃশ্যও বাদ পড়ে না। ফলে সৃষ্টি হয় উপমা-রূপক-চিত্রকল্প বাস্তবকে রাঙিয়ে তুলি পরাবাস্তবতার জাদুমন্ত্রে। সীমার মাঝে অসীমকে খোঁজার চেষ্টা আমার সীমাহীন। তবু বারবার সীমাবদ্ধতাকে কাটিয়ে উঠতে ছুটে চলি এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। সমাজ-সভ্যতা-সংস্কৃতি-ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে তুলে আনি অভিজ্ঞতার নিজস্বতায়। এখানে সাফল্য-ব্যর্থতা আমার সামনে দাঁড়াতে পারে না বাধার পাহাড় হয়ে। সাফল্য-ব্যর্থতা নয়, মানুষের ভালোবাসা পেতে আমি উন্মুখ হয়ে থাকি। ‘নির্বাচিত কবিতা’ এই শিরোনামে বই বের হবে―এই ভাবনা ছিল না আমার মাঝে। সতীর্র্থ কবিবন্ধু, কবিতাপ্রেমিক, বিশেষ করে প্রকাশকের পরামর্শে শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে গেলাম। ‘নির্বাচিত কবিতা’র ভূমিকা লিখে দিয়ে আমার ভালোবাসাকে আরো বাড়িয়ে দিলেন কবি ও সাহিত্য সমালোচক আল হাফিজ। আমি কৃতজ্ঞ তাঁর কাছে। ধন্যবাদ জানাচ্ছি―তরুণ কবি এনাম রাজুকে মূলত তারই সমন্বয়ে শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে ‘নির্বাচিত কবিতা’। শেষ কথা হলো কবিতাপ্রেমিক ও পাঠক-পাঠিকাগণই এজন্য কবিকে বাঁচিয়ে রাখেন, জাগিয়ে রাখেন সব সময়। আমার নির্বাচিত কবিতা যদি তাদের ভালো লাগে তবেই আমি পেয়ে যাব সৃজনানন্দের সুখ।
প্রেম ও প্রকৃতির কবি ফাহমিদা ইয়াসমিন জন্ম: ৩১ ডিসেম্বর, মৌলভীবাজার জেলার বড়কাপন গ্রামে। বাবা: প্রবাসী শিল্পপতি আলহাজ্ব মো. ইলাছ মিয়া, মা: ফজিলাতুন্নেছা চৌধুরী। লন্ডন প্রবাসী কবি ফাহমিদা ইয়াসমিনের স্বামী প্রকৌশলী মো. ফয়জুল ইসলাম ও আদরের দুই সন্তান ফারহাত, ফারহান। তিনি সরকারি মৌলভীবাজার মহিলা কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। শত ব্যস্ততার মাঝে থেকেও সাহিত্যের সকল শাখায় গভীর মনোনিবেশ করে যাচ্ছেন সতত। দেশ বিদেশের দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক পত্রিকা, অনলাইন মিডিয়া ও বিভিন্ন সংকলনে অনবরত লিখে যাচ্ছেন, প্রবন্ধ, কবিতা, গল্প, ছড়া। লেখকের প্রকাশিত গ্রন্থ স্বপ্নচারী মন (কবিতা), নীলিমার প্রেম (কবিতা), শংকা সময়ের নিষিদ্ধ ধ্বনি (কবিতা), ডায়েরির শেষ পাতা (উপন্যাস), ফুল ফুটে পাখি উড়ে (শিশুতোষ ছড়া), বিদ্রোহী বিক্ষোভ (কবিতা), অস্তিতের বিষণ্ণ দেয়াল (কবিতা), কথার সুঁতোয় সেলাই করি আগামীর স্বপ্ন (কবিতা), ফারহানের মুক্তিযুদ্ধ (শিশুতোষ গল্প), ফারহাতের বিজয় (শিশুতোষ গল্প)।