সুনিপুণ সন্ধ্যার ওষ্ঠে অনিন্দ্য আরাধনার ছলে প্রার্থনায় নিমগ্ন বিস্তৃত জনমানবহীন ভীষণ অরণ্যের কোলে কুপির সলতের আলো-ছায়ায় যে শব্দের মায়াজাল নকশিকাঁথার ফোড়নের মতো বুনেছিল কিছু সন্ন্যাস; কে জানত বাঙালি জাতিসত্তার অমিয় স্রোতধারা সেই চর্যাপদের অঙ্কুরিত বীজ একদিন বরেন্দ্রকোলে নির্জন গুহার পাশ ঘেঁষে তুষারক্লান্ত আস্তাবল হতে বেরিয়েই ফুলে-ফলে, পত্র-পল্লবে সাজিয়ে তুলবে শ্যামল মেয়ের গাত্রবর্ণ! ক্রুশবিদ্ধ সময়ে মাতৃস্তনে মুখ রেখে যখন শত-সহস্র শিশু হত্যার দায়ভারে মানবতার উপড়ানো চোখে নৈঃশব্দ লোনাজলের আর্তি, তখন গর্ভধারিণীর আফসোসে প্রচ্ছদরাঙা বিকেল নিয়ে পরম্পরায় বিপরীত স্রোত ও বিক্ষুব্ধ কোলাহলের আটচালায় ধ্যানমগ্ন দৃঢ়চেতা এক সাম্প্রতিক সন্ন্যাস অনিন্দ্য সাজিয়ে যান যাপিত দিনলিপি; কখনওবা প্রেয়সীর অশ্বগন্ধা বুকে আজন্ম লালিত স্বপ্নকুসুম ঘুমের প্রার্থনা কিংবা অন্ধকারের মতো ভয়ঙ্কর সুন্দর গোরস্থানে করেন নীরবতার খোঁজ। ‘গুয়ান্তানামো বে আর আবু গারিবেরা তখন মাথা ঠুকে মরে পাথর বিলাপে’- এই নীরবতার এতোটাই স্পর্ধা। খুব শান্ত ও স্নিগ্ধস্বরে অনিন্দ্য আরো উচ্চারণ করেন কথাদের কথা, অনুভবের কথা, পারিপার্শ্বিক কম্পমান সময়ের কথা এবং এই মগ্নচৈতন্য থেকে আভাস ও ইঙ্গিতে ভোরের সহজ আলোর মতো কোমল ও নমনীয় ভাষায় তিনি তাঁর হৃদয়ের আরাধনা ব্যক্ত করেন। পাঠের পর কিছু যেন বাকি পরে রয়- অনিন্দ্য‘র সে আরাধনা এমন। কিছু যেন বলতে চান অনিন্দ্য। কিছু যেন বলে যান অনিন্দ্য। কী সেই সুন্দর! ভীষণ সরল পাঠ করি সুখপাঠ্য সে-ই ঘোর... শাহীন খন্দকার।। সুমন সৈকত