লেখকের কথা যে জাতির সাহিত্য-সংস্কৃতি যত মার্জিত ও উন্নত সে জাতি তত সভ্যতার দাবীদার। বর্তমান আধুনিক বিশ্বে মানুষ শিক্ষা-দীক্ষায় যত বেশি উন্নত হচ্ছে, সভ্যতার গন্ডি থেকে ততই দূরে ছিটকে পড়ছে। ইসলাম একটি স্বতন্ত্র ধর্ম। মুসলমানরা একটি স্বতন্ত্র জাতি। এই জাতির কৃষ্টি-কালচার ও সংস্কৃতিও স্বতন্ত্র এবং সে সংস্কৃতি প্রেরিত হয়েছে উর্ধ্বাকাশ থেকে সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক। কিন্তু বর্তমানে অপসংস্কৃতির সয়লাবে সেই স্বতন্ত্র নির্ভেজাল সংস্কৃতি বিলুপ্তির পথে। এই বিলুপ্তির কারণ হলো- কৃষ্টি-কালচার ও সংস্কৃতি প্রসার লাভ করে থাকে প্রচারের মাধ্যমে। আর এই প্রচার মাধ্যমের সঙ্গে জড়িত থেকে মুখ্য ভূমিকা রেখে থাকেন লেখক ও প্রকাশকগণ। তাই দুই সম্প্রদায়ের মনমানসিকতার উপর নির্ভর করে সাহিত্য-সংস্কৃতির উন্নতি ও অবনতি। কারণ তাদের পরিবেশিত আহার গলধঃকরণ করে থাকে দেশের যুব সমাজ। তাই লেখক ও প্রকাশক মহোদয়গণ যেরূপ খাদ্য পরিবেশন করবেন যুব সমাজ বা পাঠক তাই আহার করবেন এবং সেভাবেই তাদের স্বাস্থ্য গড়ে উঠবে। বর্তমানে লক্ষ করা যাচ্ছে, উলঙ্গ অপসংস্কৃতি এমনভাবে জেঁকে বসেছে যে, সেখান থেকে যুব সমাজকে ফিরিয়ে আনা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে উপন্যাস সাহিত্য। যে সাহিত্য সবচেয়ে বেশি পঠিত হয়ে থাকে এবং যার পাঠক অধিকাংশ যুবক-যুবতী। আর যুবক-যুবতীরা বেশি আকৃষ্ট হয়ে থাকে যৌন সুড়সুড়িমূলক সস্তা প্রেম-কাহিনীর প্রতি। এটা তাদের দোষ নয়, তাদের বয়সের ধর্ম। তাই দেখা যাচ্ছে মুসলমান ঘরের ছেলেমেয়েরা ক্রমশই নৈতিক চরিত্র হারিয়ে ফেলছে। জরিপ করে দেখা গেছে এর মূলে কাজ করছে উলঙ্গ মিডিয়া ও যৌন সুড়সুড়িমূলক কাব্য উপন্যাস। ষাটের দশকেও এদেশ ছিল অপসংস্কৃতি থেকে মুক্ত। তখনকার কাব্য উপন্যাসগুলো মার্জিত রুচিসম্পন্ন। তারপর দেশ স্বাধীন হবার পর যখন স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ও বিপক্ষের শক্তি হিসাবে মুসলমানদের দুটি দলে বিভক্ত করা হলো এবং ঈমানদার ইসলাম প্রেমিক মুসলমানদের মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক আখ্যায় আখ্যায়িত করে বিপক্ষের শক্তি হিসাবে চিহ্নিত করা হলো, তখন ইসলামপন্থী লেখকরা নিক্ষিপ্ত হলেন আস্তাকুঁড়ে। তখনকার ইসলাম বিদ্বেষী প্রশাসন তাদের প্রচার মাধ্যমগুলোতে ইসলামের পক্ষের লেখকদের লেখা অগ্রহণযোগ্য বলে গণ্য হতে লাগল। যার কারণে এই লেখককেও প্রায় দুই দশক কলম বন্ধ রাখতে হয়েছিল। তখন অধিকাংশ প্রকাশকও নিজ স্বার্থ রক্ষার্থে ও অর্থ কামাইয়ের ধান্ধায় সরকারের লেজুড়বৃত্তি করে বামপন্থী লেখকদের উলঙ্গ যৌন সুড়সুড়িমূলক কাব্য-উপন্যাস প্রকাশ করে বাজারে ছাড়তে লাগল। ফলে যা হবার তাই হলো, যুব সমাজ মনের নতুন খোরাক পেয়ে ইসলামী তাহজীব তমদ্দুন থেকে ধীরে ধীরে নিজেদের সরিয়ে নিয়ে অপসংস্কৃতির সাগরে গা ভাসিয়ে চরিত্র ধ্বংস করার ব্রত নিল। যার ফলশ্রুতিতে দেশ আজ এক অরাজকতার গহ্বরে হাবুডুবু খাচ্ছে।
কোন কোন প্রকাশক বলে থাকেন, ইসলামী ভাবধারার উপর লেখা উপন্যাস সাহিত্য রস-কসহীন হওয়ায় অধিকাংশ পাঠক তাতে আনন্দ পায় না, আর যে উপন্যাসে আনন্দ বা মনের খোরাক না থাকে সে উপন্যাস আধুনিক সমাজের যুবক-যুবতীরা পড়তে চায় না। আমি এই মন্তব্যকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে উপন্যাস লেখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। ১৯৯৬ সালে ইসলামী ভাবধারার উপর প্রথম উপন্যাস লিখি ‘মিনা হাসনার রাত দিন’। উপন্যাসটি ১৯৯৭ সালে ঈদুল আযহা সংখ্যায় সাপ্তাহিক মুসলিমজাহানে ছাপা হয়। এটা ছাপা হবার পর কয়েকটি স্কুল ও মাদরাসা থেকে প্রশংসাপত্র আসতে থাকে এবং মুসলিমজাহানেও কয়েকটি প্রশংসাপত্র ছাপা হয়। এছাড়া রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার সাহিত্য উন্নয়ন পরিষদ ও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে উপন্যাসখানার উপর আমাকে সংবর্ধনা ও স্বর্ণপদকে ভূষিত করেন। এই উৎসাহে আমি পর পর ১০/১২টি উপন্যাস লিখি, তার মধ্যে ৮খানা উপন্যাস ইতোমধ্যেই বিভিন্ন মাসিক ও সাপ্তাহিকে ছাপা হয়েছে এবং বাকীগুলো ছাপার অপেক্ষায় আছে। প্রতিটি উপন্যাসই পাঠকনন্দিত হয়েছে। তবে পুস্তক আকারে ‘আদর্শ এক গৃহবধূ’ই প্রথম। আমার চ্যালেঞ্জ ছিল ইসলামী চেতনায় ধর্মীয় সংস্কৃতি ঠিক রেখে উপন্যাস রচনা করে উলঙ্গ সংস্কৃতির চেয়েও পাঠকের মনের খোরাক অনেক বেশি দেয়া যায়। আমি আমার চ্যালেঞ্জে সফল হয়েছি ইনশাআল্লাহ। তবে অর্থাভাবে বই আকারে প্রকাশ করতে না পারায় পাঠকদের খেদমতে পৌঁছাতে সক্ষম হইনি। সক্ষম হলে অপসংস্কৃতির গন্ডি থেকে যুব সমাজকে ফিরিয়ে আনা অবশ্যই সম্ভব হতো। কারণ যে কোন সাহিত্যই বিশেষ করে নাটক, উপন্যাস বা গল্প হতে হবে বাস্তবধর্মী। তাতে থাকতে হবে দেশের, সমাজের ও মানুষের জীবনের প্রতিচ্ছবি। অবাস্তব গল্প কাহিনী জাতিকে কিছু দিতে সক্ষম নয়। তাই জাতিকে অশ্লীলতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে হলে প্রয়োজন সমপরিমাণ রুচিশীল বাস্তবধর্মী সাহিত্য সৃষ্টি করা। আর এ কাজটি মোটেও কঠিন নয়- যদি ইসলামিক কলাম লেখকরা ধর্মীয় ভাবধারায় পাঠকের মনমানসিকতা উপলব্ধি রেখে কাব্য-উপন্যাস লিখতে শুরু করেন এবং প্রকাশকগণ ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধ্বে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে সেগুলো প্রকাশ করেন।
বর্তমান উচ্ছৃঙ্খল সমাজকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে নারী জাতিকে আদর্শ মাতা, জায়া ও ভগ্নীরূপে গড়ে তুলতে হলে এই উপন্যাসটি প্রতিটি ঘরে ঘরে মা বোন ও বধূদের হাতে তুলে দিতে হবে। উপন্যাসটির পাণ্ডুলিপি দেখে ভুল ত্রুটি ধরিয়ে দিয়ে সহযোগিতা করায় লেখক ও কলামিষ্ট স্নেহভাজন ডা. মাওলানা আবদুল মালেক সাহেবের কাছে আমি ঋণী হয়ে রইলাম। আর একজন সহৃদয় ব্যক্তি যার উৎসাহ-উদ্দীপনা ও বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতা আমার লেখক জীবনে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে তিনি হলেন আমার একান্ত শুভাকাক্সক্ষী বন্ধু দেওয়ান মাসুদুর রহমান (জানু) তাঁর কাছেও আমি কৃতজ্ঞ। পরিশেষে উপন্যাসটি পাঠ করে পাঠক যদি পরিতৃপ্ত হন তাহলে আমার শ্রম স্বার্থক হবে এবং আগামীতে অন্যান্য উপন্যাস প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করব ইনশাআল্লাহ। বিনীত আবদুল খালেক জোয়ারদার
এক ‘আসসালাতু খাইরুম মিনান্নাউম!’ নিদ্রার চেয়ে নামায শ্রেষ্ঠ। আযানের এ শব্দ কানে যাওয়ার সাথে সাথে শাহিদার ঘুম ভেঙ্গে যায়। বিছানায় উঠে বসে পাশের জানালাটা খুলে দেয় শাহিদা। বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখে তখনো গুমোট অন্ধকার বিরাজ করছে। হঠাৎ কিসের যেন একটা শব্দ শুনতে পায় সে। ভয়ে গা শিউরে ওঠে শাহিদার। তাড়াতাড়ি জানালা বন্ধ করে দিয়ে কিছুক্ষণ নিশ্চুপ বসে থাকে বিছানার উপর কান খাড়া করে। না, আর কোন শব্দ শুনতে পায় না সে। ভাবে আর একটু শুয়ে থেকে উঠলেই হবে। এখনো তো অন্ধকারই কাটেনি। পরক্ষণেই চিন্তা করে, না এখন আর ঘুমিয়ে থাকা ঠিক হবে না। এখন ঘুমুলেই ফজরের নামায নির্ঘাত কাজা হবে। শয়তান দুনিয়ার ঘুম এনে চোখে চেপে ধরবে।
শাহিদা খাট থেকে নেমে ঘরের বাতি জ্বালিয়ে দেয়। তারপর দরজা খুলে বারান্দায় পা রাখে। এমন সময় পাশের রুমের দরজা খুলে বের হয়ে আসে শাহিদার মা শাহিনা বেগম। তিনি শাহিদাকে দেখে বলেন, আর একটু পরে উঠলেই পারতিস মা! নামাযের এখনো অনেক সময় আছে। অন্য কোন মসজিদে এখনো আযান পড়েনি। আমাদের মসজিদের মুয়াজ্জিন সাহেব সকলের আগে আযান দিয়ে কর্তব্য শেষ করেন।
মায়ের কথার জবাবে শাহিদা বলে, ফজরের আযান সময় হাতে রেখে দেওয়াই ভাল। তাতে নামাযীরা ধীরে-সুস্থে আসার সুযোগ পায়। ঐ যে আব্বাও উঠে পড়েছেনÑ বলেই শাহিদা বাথরুমে গিয়ে ঢোকে। ফজরের নামায শেষ করে শাহিদা বসে কুরআন তিলাওয়াতে আর মা শাহিনা বেগম রান্না ঘরে ঢোকেন নাশ্তার যোগাড়ে। সকালের নাশ্তা শাহিনা বেগমকেই করতে হয়। কারণ কাজের ঠিকা ঝি আটটার আগে আসে না। ছোট কাজের মেয়ে শিউলিকে দিয়ে থালা-বাসন মাজা, ঘর-দরজা ঝাড় দেয়া ও ফাই-ফরমাস চলে মাত্র। খান বাহাদুর রফিক আহমেদের ফজরের নামায পড়ে বাসায় ফিরেই চা-নাশ্তা করার অভ্যাস অনেক পুরাতন। তাই ফজরের নামায শেষ করেই শাহিনা বেগমকে ঢুকতে হয় রান্নাঘরে। খান বাহাদুর রফিক আহমেদের দুই মেয়ে শরিফা ও শাহিদা। এক ছেলে রকিব। শরিফার বিয়ে দিয়েছেন খুলনার ধনাঢ্য শিল্পপতি আতিকুর রহমান চৌধুরীর ছেলে লতিফুর রহমানের সাথে, আর ছেলে রকিব আহমদ এমএ, এলএলবি পাশ করে এক বছর হলো ঢাকা বারে জয়েন করেছে। এখনো পসার জমে উঠেনি। আর ছোট মেয়ে শাহিদা বিএ ক্লাশের ছাত্রী। খান বাহাদুর রফিক আহমেদের পিতা কফিল আহমেদ ছিলেন একজন প্রভাবশালী জমিদার। বৃটিশ সরকার এই খান বাহাদুর উপাধি জমিদার কফিল আহমদকেই দিয়েছিল। পিতার মৃত্যুর পর প্ত্রু রফিক আহমেদ এ উপাধি ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত হন। তারপর জমিদারী চলে যাবার পর খান বাহাদুর রফিক আহমেদ ঢাকায় চলে আসেন এবং ব্যবসা গড়ে তোলেন। পৈত্রিক বাড়ি-ভিটা ছাড়া গ্রামে আর জমাজমি রাখেননি দেখাশোনার লোকের অভাবে। সব জমি বিক্রি করে তিনি ব্যবসার দিকে মন দেন। এখন ঢাকায় তাঁর তিনখানা বাড়ি। একখানা দোতলা বাড়িতে তিনি সপরিবারে বসবাস করছেন। আর দু’খানা বাড়ি ভাড়া দিয়েছেন। খান বাহাদুর সাহেবের ইচ্ছা ছিল ছেলে রকিবকে তিনি ব্যবসায় ঢুকিয়ে নিজে অবসর নেবেন। কিন্তু রকিব কিছুতেই ব্যবসার ঝামেলা মাথায় নিতে রাজি হয় না। খান বাহাদুর সাহেব ব্যবসার পরিধি ছোট করে আনলেও কয়েকখানা দূরপাল্লার বাস, তিনটি ট্রাক, একটি পেট্রোল পাম্প ও দুটি কোল্ড স্টোরেজ এখনো আছে। এগুলো আগে খান বাহাদুর সাহেব নিজেই দেখাশোনা করতেন। একদিন স্ত্রী শাহিনা বেগম স্বামীকে বললেন, তুমি লোক খুঁজে ফিরছ, অথচ আমাদের ঘরেই তো লোক আছে। এ কথায় খান বাহাদুর সাহেব থ মেরে স্ত্রীর মুখের দিকে সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকালেন। শাহিনা বেগম স্বামীর দৃষ্টির অর্থ বুঝতে পেরে মৃদু হেসে বললেন, ঘরের লোক দেখতে পাচ্ছ না, তাই না? : হ্যাঁ, মানে তুমি কার কথা বলছ, আমি ঠিক অনুমান করতে পারছি না। বললেন খান বাহাদুর সাহেব। শাহিনা বেগম বললেন, আমাদের মেহেদী হাসান। এমএ পরীক্ষা দিয়ে এখন বাড়িতেই বসে আছে। সবদিক দিয়েই হাসান ভাল ছেলে। কমার্সের ছাত্র ছিল। হিসাবপত্রও ভাল বুঝবে। তাছাড়া ছেলেটার স্বভাব-চরিত্রও খুবই ভাল। পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে। স্ত্রীর কথা শুনে খান বাহাদুর সাহেবের চোখে মুখে খুশির আভা ফুটে উঠল। তিনি বললেন, শরিফার মা, আমার ইচ্ছে হচ্ছে এই মুহূর্তে তোমাকে একটা মূল্যবান পুরস্কারে ভূষিত করি। কিন্তু হাতের কাছে তেমন কিছু নেই, তবে পাওনা থাকল। সত্যি রতœ ঘরে রেখে আমি মাঠে ময়দানে খুঁজে ফিরছি। কিন্তু কথা হলো, হাসান কি এত উচ্চ শিক্ষিত হয়ে প্রাইভেট ফার্মে আসবে চাকরি করতে? খান বাহাদুরের কথায় শাহিনা বেগম আশ্বাস দিয়ে বললেন, আসবে। দুলাভাই মারা যাবার পর ওদের অবস্থা এখন ভাল না। বড় আপা কিছুদিন আগে আমাকে বলেছিলেন, সংসার চালাতে আমাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। একমাত্র ভরসা হাসান। হাসান পাস করে বের হয়ে কোন চাকরি না করা পর্যন্ত আমি স্বস্তি পাচ্ছি না। তাই আমার ধারণা বড় আপাকে বললে না করবে না। সরকারী চাকরি পাওয়াতো সোনার হরিণ ধরার সামিল। শুনেছি একটা কেরানীর চাকরি নিতে গেলেও নাকি লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়। অথচ আপার সে ক্ষমতা নেই। তুমি যদি রাজি থাক আমি আপাকে খবর পাঠাই।
স্ত্রীর কথায় খান বাহাদুর সাহেব বললেন, বলো কি! রাজি থাকব না মানে? অমন একটা উপযুক্ত অফার, তাছাড়া সেতো আমদেরই ছেলে। নিজের বাড়ির মতই থাকবে। উহ্! তুমি আমাকে বিরাট চিন্তার হাত থেকে বাঁচালে। আজই খবর পাঠাও। আমি একা আর সামাল দিতে পারছি না। ভেবেছিলাম রকিবকেই সব বুঝিয়ে দেব; কিন্তু সে কিছুতেই ব্যবসায় আসতে রাজি হলো না, ঢুকল ওকালতি করতে।
করুক না কিছু দিন। তারপর বিয়ে-শাদী হলে আপনাতেই মত বদলাবে। তুমি বরং ওর বিয়ের ব্যবস্থা কর। স্বামীকে উদ্দেশ্য করে বললেন শাহিনা বেগম। এ ঘটনা এক বছর আগের। এখন খান বাহাদুর তার ব্যবসার সমস্ত দায়িত্ব মেহেদী হাসানের হাতে সঁপে দিয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। মেহেদী হাসানও বিজ্ঞতার সাথে তার দায়িত্ব পালন করে খালা ও খালুর সুদৃষ্টি অর্জন করে অত্যন্ত আদর যত্নে দিন কাটাচ্ছে। খান বাহাদুর সাহেব মেহেদী হাসানকে দশ হাজার টাকা বেতন ছাড়াও খাওয়া-পরা সব খরচই বহন করে থাকেন। যার কারণে মেহেদী হাসানের মায়ের সংসারেও আর অভাব নেই। তবে মেহেদী হাসানকে প্রায়ই বাইরে থাকতে হয়। খান বাহাদুর সাহেবের দুটি কোল্ড স্টোরেজই বাইরে। একটা গাজীপুর আর একটা নারায়ণগঞ্জে। তাই দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। তাছাড়া বাস ও ট্রাকের দেখাশোনাও তাকেই করতে হয়। যদিও সহযোগী আরো অনেক লোকই আছে, কিন্তু নির্বাহী ক্ষমতা সবই মেহেদী হাসানের হাতে। তাই সব জায়গায়ই তার উপস্থিতির দরকার হয়। মেহেদী হাসান আসার পর খান বাহাদুর আরো একখানা গাড়ী কিনেছেন। আগের গাড়ীখানা দিয়ে ছেলে রকিব কোর্টে যায়। যে কারণে মেহেদী হাসানের জন্য আর একখানা গাড়ী কিনতে হয়।
শাহিদার বিএ পরীক্ষা সামনে। শাহিনা বেগম একদিন মেহেদী হাসানকে বললেন- বাবা হাসান! শাহিদার সামনে পরীক্ষা। তুমি সময় করে ওকে যদি পড়ার ব্যাপারে কিছু সাহায্য করতে তাহলে ওর খুব উপকার হতো। তোমার খালু বাইরের মাষ্টার রেখে পড়াতে মোটেও রাজি নন। তাছাড়া তোমার খালুতো ওকে আর পড়াতেই চাচ্ছেন না। বলেছেন, বিএ পরীক্ষা হলেই মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিবেন। মেহেদী হাসান আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করে- কেন খালাম্মা! শাহিদাকে আর পড়াবেন না কেন? তোমার খালু বলে, ভার্সিটিতে এখন আর লেখাপড়ার পরিবেশ নেই। ভার্সিটির হলে মেয়েরা নাকি গাঁজার আসর বসায়। ভার্সিটির ছেলেরা নাকি মেয়েদের সম্মান রক্ষা করে চলে না। শিক্ষাঙ্গনগুলো এখন রাজনীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। ওখানে ছেলেমেয়েরা যায় শিক্ষা গ্রহণ করতে, কিন্তু বের হয়ে আসে সন্ত্রাসী হয়ে।