সবাই চায় আপন সৃষ্টি বেঁচে থাকুক। দীর্ঘজীবী হোক। অমুছিত থাকুক তাঁর রেখে যাওয়া চিহ্ন। কবিও এর ব্যতিক্রম নন। কেননা, তিনি জানেন, যেখানে বসে আকাশচুম্বী স্বপ্ন দেখছেন, আশা-আকাঙ্ক্ষার জাল বুনছেন এবং উপরে উঠতে সিঁড়ি ভাঙছেন ও উল্টো হওয়ার সঙ্গে লড়ছেন- এসব স্থায়ী নয়; বরং এগুলো তাসের ঘর বা বালির বাঁধের চেয়েও ভঙ্গুরপ্রবণ। কালপ্রহর গুনছে যেদিন সবাই তাকে বিদায়ের হাত নাড়া দেবে। হয়তো মেঘে ঢেকে যাবে কারো করো মুখ। এমনকি, আষাঢ়ের ভরা বর্ষাও দেখা যাবে অনেকের চোখে মুখে; কিন্তু কেউ তাঁকে ফেরাতে পারবে না, তাঁর যাত্রা অজানা-অচেনা পথে, নিঃসঙ্গ। এভাবে চলে যেতে হবে জেনেই সৃষ্টিশীল মানুষেরা কেউ কেউ আগেভাগেই পরবর্তীকালের জীবন নিয়ে একটু বেশি সজাগ। সেজন্য এমন কিছু রেখে যেতে চায় যা থেকে অঙ্কুরোদগম হয়। চারাটি বড় হয়, বৃক্ষ হয়। পত্রপল্লবে, ফুলে-ফলে সুশোভিত হয় এবং তার ভাগিদার হয় এলাকাবাসী, দেশবাসী- সারা পৃথিবী। অর্থাৎ যেই কর্ম তাঁর অবর্তমানেও উঁকি দেবে, কথা বলবে এবং অন্যকে ভাবাবে। তাঁর অনুপস্থিতির জায়গাটা যেন উজাড় ভিটা হয়ে না পড়ে; বরং ঝর্ণাযুক্ত বাগিচার মতো সরব থাকে অবিরাম। সেই লক্ষ্যেই তিনি দু’মলাটে বন্দি করেছেন রকমারি স্বাদের কবিতা। এর একটি লেখা বা একটি পংক্তিও যদি পাঠককে বিন্দুবিসর্গও নাড়া দিতে পারে, তবেই ধরে নেয়া হবে তাঁর এই শ্রম মেকিদের অনাত্মীয়।