শব্দের ব্যবহার শুরু করার আগে আমরা দেখতে শিখি। একটি শিশু কথা বলতে পারার আগে দেখতে আর চিনতে শেখে। কিন্তু আরো একটি অর্থ আছে, যেখানে দেখা শব্দের আগে আসে। আর এই দেখা বা দর্শনই চারপাশের পৃথিবীতে আমাদের অবস্থানকে প্রতিষ্ঠিত করে। শব্দ ব্যবহার করে আমরা সেই পৃথিবীকে ব্যাখ্যা করি, কিন্তু আমরা যে এর দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে আছি সেই বাস্তব সত্যটিকে শব্দ কখনো বাতিল করতে পারে না। আমরা যা দেখি আর আমরা যা জানি এ দুটির মধ্যে সম্পর্ক সর্বদা অমীমাংসিত রয়ে যায়। প্রতিদিন সন্ধ্যায় আমরা ‘দেখি’ সূর্য অস্ত যাচ্ছে। আমরা ‘জানি’ যে পৃথিবী সূর্যের দিক থেকে অন্যদিকে পাশ ফিরিয়ে নিচ্ছে। তারপরও এই জ্ঞান, এই ব্যাখ্যা, কখনোই সূর্যাস্তের দৃশ্যের সাথে ঠিক মানানসই বলে মনে হয় না। পরাবাস্তববাদী শিল্পী রেনে ম্যাগ্রিট শব্দ আর কোনো কিছু দেখার মধ্যে চিরন্তন-উপস্থিত এই ব্যবধান নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন ‘দ্য কি অব ড্রিমস’ নামক তার একটি চিত্রকর্মে। আমরা কোনো কিছু যেভাবে দেখি, সেটি আমরা যা জানি বা যা বিশ্বাস করি তার দ্বারা প্রভাবিত হয়। মধ্যযুগে মানুষ যখন নরকের বাস্তব অস্তিত্বে বিশ্বাস করতো, সেই সময়ে আগুনের দৃশ্যের অর্থ বর্তমানে এর যা অর্থ, তার থেকে অবশ্যই খুব ভিন্ন ছিল। তবে যা-ই হোক, নরকের ধারণাটি, আগুনের লেলিহান শিখার কিছু গ্রাস করা ও অবশিষ্ট রয়ে যাওয়া ভস্মের দৃশ্য, এছাড়া তাদের দগ্ধ হবার যন্ত্রণাময় অভিজ্ঞতার কাছেও অনেকাংশেই ঋণী।