হৃদয়ের রংতুলিতে বুদ্ধিদীপ্ত প্রতিভার অনন্য সৃষ্টি এ কাব্যটি। প্রেম-প্রকৃতি-মানব মনের রহস্য উদ্ধারে মনের বিচিত্র গতিপথে কবি রওনক জাহানের অনায়াস হাঁটার পারঙ্গমতা সহজে পাঠকের নজর কাড়বে। উদীয়মান সূর্যের বর্ণছটার মতো তার কবিতা যেমন কিরণ ছড়ায়, তেমনি তার মমত্বশীল মননের অনুরাগে কবিতার রসদ হয়েছে পরিপুষ্ট। কবিতার শব্দের পরতে পরতে রয়েছে সচেতন যত্নশীলতার চাপ। স্বীয়প্রজ্ঞা ও সৃজনশীলতার স্বতঃস্ফূর্ততায় রওনক আবিষ্কার করেন সম্পকের্র গোপন সূত্র। তাকে বলতে দেখি, ‘আপন শব্দটা সময়ে সুতোর টানে পর হয়ে যাচ্ছে’। একই দর্শনে তার বুকে জ্বলে ওঠে ‘আগুনের উদ্যান’। তাই রাতজাগা চাঁদতিথিই শুধু খবর রাখে তার মনের অলিগলির। প্রেমে-আবেগের প্রহেলিকায় তরী ভাসান না, বীক্ষণ ও নিরীক্ষণে মানব-মানবীর সম্পর্কের সত্য উদ্ঘাটনে সদা থাকেন উদগ্রীব। আবার মানবতার স্বরূপ আবিষ্কার করে অঙ্গুলি উত্তোলন করেন সাম্্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। রওনক ভাবুক বলে ভাবসঞ্চারী। ঘুরেফিরে তার ভাবনাতে জেগে থাকে মানুষ-নদী-পাহাড়-সমুদ্র, আর মানুষের জন্য ভালোবাসা। গোটা বিশ্বটাই তার কাছে রহস্য, কিন্তু সেই রহস্য ভেদ করে দেখেন সমস্তটাই আসলে একরত্তি বীজের কিরণ। ভাবগভীর বস্তুনিষ্টতা, ছান্দিক কাব্যভাষা, পরিশীলিত শব্দ নির্বাচন, রূপকের যুতসই প্রয়োগ তার কবিতাকে যথেষ্ট স্বাতন্ত্রিক বিশিষ্টতা দান করেছে। তাই বলা যায়, রওনক আধুনিক বাংলা কবিতার শুদ্ধস্বর।