রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই ছিলেন একটি ছায়াবৃক্ষ। এই বিশাল বৃক্ষের বিস্তৃত ছায়ায় দীর্ঘ বিশ্রাম নিতে পেরে অনেকে ধন্য হয়েছেন। কেউ কেউ নিজেকেই একটি বৃক্ষরূপে দাঁড় করাতে পেরেছেন। এমন করে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য বৃক্ষ, তৈরি হয়েছে অপরিমেয় ক্ষেত্র জুড়ে সুশীতল ছায়া। দাদাভাই ছিলেন আমাদের চেতনার অন্ধকারে একটি আলোবিন্দু। এই ক্ষুদ্র আলোর ঝলকানিতে সকল অন্ধকার হারিয়ে গিয়ে ধবধবে ফরসা হয়ে উঠেছে আমাদের স্বপ্নের বাগান। চারদিকে অসংখ্য ফুল মিষ্টি সৌরভ বিলিয়ে বেড়াচ্ছে ফুরফুরে হাওয়ায়। আর এটা সম্ভব হয়েছে দাদাভাই পরিচালিত ‘কচি-কাঁচার মেলা’ নামক ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে। কচি-কাঁচার মেলা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে শিশুদেরকে উপযুক্ত করে গড়ে তোলার ব্যাপারে অবদান রেখে চলেছে। এই মেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত সকল শিশুই আদর্শের মূলমন্ত্র নিয়ে গড়ে উঠেছে। হয়তো সে কারণেই দাদাভাই গর্বের সাথে উচ্চারণ করেছেন, কচি-কাঁচার মেলার সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে এবং স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করেছে, কিন্তু কেউ রাজাকার হয়েছে বা পাকিস্তানি সেনাদের দোসর হয়েছে এমন রেকর্ড নেই। এই দৃপ্ত উচ্চারণ দিয়ে দাদাভাই দেশের প্রতি ভালোবাসার কথা বলতে চেয়েছেন। তিনি বলতে চেয়েছেন, তাঁর শিক্ষা শুধু দেশ গড়ার, মানুষ গড়ার।
Sa. Mo. Shamsul Alam ১৯৬২ সালের ২৫ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। পৈতৃক নিবাস রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলাধীন শিকজান গ্রামে। পিতা প্রয়াত এস. এম. শাহজাহান আলী এবং মাতা সালেহা শাহজাহান। তিনি ১৯৭৯ সাল থেকে লেখালেখি শুরু করেন এবং সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় তাঁর অবাধ বিচরণ। প্রকাশিত গ্রন্থ প্রায় অর্ধশত। শিশুকিশোরদের জন্য লেখা গ্রন্থের সংখ্যা বেশি। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছেÑ আমার মনের আকাশ জুড়ে, মায়ের অলংকার, হেসে ফাটে দম, আব্বুর ফিরে আসা, আমার দেশের মনের সাথে, বাবার কবর, মিরধা ভাইয়ের মজার কীর্তি, শব্দরম্য, নতুন রঙে আঁকা, গল্প নাচে ছড়ার গাছে, ছড়াসমগ্র, কিশোর কবিতা সমাহার, কিশোর গল্প সমাহার প্রভৃতি। ২০১৬ সালে প্রকাশিত ‘আমার বঙ্গবন্ধু’ বইটি পাঠক-সমাজে সমাদৃত হয়েছে।
স.ম. শামসুল আলম বেশ কিছু সংগঠন থেকে সংবর্ধনা-সম্মাননা পেয়েছেন। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, শিশুসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য অতীশ দীপঙ্কর গবেষণা পরিষদ কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা সম্মাননাÑ২০১৪, কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্য কবি ওমর আলী সাহিত্য পদকÑ১৪২২, ছড়াসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্মৃতি পদকÑ২০১৬, বাংলাদেশ শিশুসাহিত্য একাডেমি কর্তৃক মায়ের অলংকার গ্রন্থের জন্য কিশোরকবিতা সম্মাননাÑ২০১৬, কিশোর কবিতা ও গদ্যে বিশেষ অবদানের জন্য মোহাম্মদ নাসির আলী শিশুসাহিত্য পুরস্কার-২০১৭ প্রভৃতি। বর্তমানে তিনি নির্মাণ ও আবাসন ব্যবসার সাথে জড়িত। শিশু-কিশোর সংগঠন আনন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।