ভূমিকা যাঁরা লেখালেখি করেন তাঁরা নিজেদের লেখাকে সবসময় পাঠকের গোচরে আনতে চেষ্টা করেন। লেকার স্বার্থেই এটা তাঁদের করতে হয়। এটা তাঁরা মোটামুটি পারেনও। লেখকদের সবারই একটা নিজস্ব লেখক জীবন থাকে। তাঁরা থাকেন সেই জীবনের মধ্যে পুরোপুরি প্রোথিত। তাই নিজেদের লেখাকে মানুষের চোখের সামনে নিয়ে আসার জোরালো চেষ্টা যেমন তাঁদের ভেতর থাকে তেমনি তার সাফল্যেও থাকে।
আমি এটা পারিনি। আমি মূলত সামাজিক ও সংগঠন জগতের মানুষ। বছর কয়েক ধরে লিখছি বটে, কিন্তু পাঠকের গোচরে সেসবকে আনতে হলে যে সময় আর মনোযোগ দরকার তা আমার জোটেনি। তাই আমার লেখা সম্বন্ধে পাঠকদের জানানো খুবই অল্প। বিশেষ করে ছোটগল্প সম্বন্ধে।
ছোটগল্প সংখ্যা্য় কম, লেখা হয়েছে বিক্ষিপ্তভাবে। ফলে লেখাগুলো পাঠকদের চোখে একরকম পড়েই নি। এ পর্যন্ত আমার ছোটগল্পের বই দুটো ‘রোদনরূপসী’ আর ‘খর যৌবনের বন্দি’। আরেকটা বই ‘স্বপ্ন-দুঃস্বপ্নের গল্প’ বেরোবো বেরোবো করছে। দীর্ঘ বিরতি ও বিচ্ছিন্নভাবে এই গল্প ও বইগুলো প্রকাশিত হওয়ায় এগুলো পাঠকের দৃষ্টি পুরোপুরি এড়িয়ে গেছে। একসঙ্গে গল্পগুলো বের হলে হয়তো তা পাঠকের চোখে পড়বে এই দুরাশা নিয়ে এই গল্প-সংগ্রহ বের করলাম।
গল্পগুলো পাঠকের ভালো লাগলে কৃতার্থ বোধ করব। যার উৎসাহ না পেলে এই বই প্রকাশিত হত না তিনি অনন্যা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মনিরুল হক। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রর আলাউদ্দিন সরকার বইটি প্রকাশের প্রথম থেকে শেস পর্যন্ত অক্লান্ত সহযোগিতা দিয়েছেন, তাঁর কাছে আমার কৃতজ্ঞতা।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ একইসাথে একজন খ্যাতিমান সাহিত্যিকও। আর সমাজ সংস্কারের বিভিন্ন বিষয়ের সাথে জড়িয়ে থাকায় একজন সমাজ সংস্কারক হিসেবেও পরিচয় লাভ করেছেন তিনি। এই বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব কলকাতার পার্ক সার্কাসে ১৯৩৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন, তবে তাঁর পৈতৃক নিবাস বাগেরহাট জেলার কামারগাতি গ্রাম। পাবনা জিলা স্কুল থেকে তিনি মাধ্যমিক এবং বাগেরহাটের প্রফুল্লচন্দ্র কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর উচ্চশিক্ষার্থে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন এবং পরবর্তীতে এখান থেকেই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্মজীবনে একজন শিক্ষক হিসেবে তিনি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। ঢাকা কলেজ, রাজশাহী কলেজসহ বিভিন্ন কলেজে তিনি অধ্যাপনা করেছেন। টেলিভিশনে বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপস্থাপনার মাধ্যমে টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। আর ষাটের দশকে বাংলাদেশে সাহিত্যের এক নতুন ধারা সৃষ্টির আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন তিনি তাঁর সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে, এবং একইসাথে 'কণ্ঠস্বর' নামক একটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করে নতুন ঐ সাহিত্যযাত্রাকে করেছিলেন সংহত ও বেগবান। শুধু তা-ই নয়, দেশের মানুষের মাঝে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলে তাদের মাঝে জ্ঞান ও শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়ে তাদের আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে ১৯৭৮ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন 'বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র', যা চল্লিশ বছরেরও অধিক সময় ধরে কাজ করে যাচ্ছে এই লক্ষ্যে। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এর বই সমূহ এই ব্যাপারে বিশেষ অবদান রেখেছে। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এর বই সমগ্র এর মধ্যে 'ভাঙো দুর্দশার চক্র', 'আমার বোকা শৈশব', 'নদী ও চাষীর গল্প', 'ওড়াউড়ির দিন', 'অন্তরঙ্গ আলাপ', 'স্বপ্নের সমান বড়', 'উপদেশের কবিতা', 'অপ্রস্তুত কলাম' ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। সাহিত্য, শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি 'বাংলা একাডেমি পুরস্কার', 'একুশে পদক', 'র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার' ইত্যাদি সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।